ফখর উদ্দিন ইমরান,বিশেষ প্রতিবেদক
এক পরিবারে ৬ ভাই-বোনের মাঝে পাঁচজনই প্রতিবন্ধী। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার দেয়াল ডিঙ্গিয়ে আত্মনির্ভরশীল হতে সবাই করছেন লেখাপড়া।তারা অত্যন্ত মেধাবী, পরিশ্রমি,ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন।দরিদ্র হলেও তারা কারো কাছে কোন করুনা বা দয়া প্রত্যাশা করেনা।তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী রাষ্টীয় প্রটোকল ও আইন মোতাবেক চাকরিসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রত্যাশা করেন।পাঁচ প্রতিবন্ধীদের মাঝে একমাত্র ভাই মো. সুজন মিয়া (৩০) কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন।বোনদের মাঝে মার্জিয়া আক্তার (২৮) বাজিতপুর সরকারি কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স করেছেন,জহুরা খাতুন ( ১৯) কটিয়াদী ডা. আব্দুল মান্নান মহিলা কলেজ থেকে ২০২৪ সনে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে,মুক্তা আক্তার (১৬) উত্তর পিরিজপুর বিএম কলেজে একাদশ শ্রেণিতে এবং পান্না আক্তার (১৪) ডুয়াইগাঁও সুলতানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।ব্যক্তিত্ববান আচরণের জন্য এলাকার লোকজনের কাছে পরিচিত প্রতিবন্ধী পাঁচ ভাই বোন।তাঁরা কারোর কাছে আর্থিক সহযোগিতা চান না,সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায়ে চাকুরি করে আত্মনির্ভরশীল হয়ে সংসারের হাল ধরে সমাজে মাথা উচু করে বাঁচতে চান পাঁচ-ভাই বোন।
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়নের বিলপাড়-গজারিয়া গ্রামের মৃত মহরম আলী ও ফুলবানু দম্পত্তির এক ছেলে পাঁচ মেয়ে।তাদের পাঁচ জনই শারীরিক প্রতিবন্ধী।মৃত মহরম আলী ও ফুলবানুর সন্তানদের জন্মের সময় কোন সমস্যা না থাকলেও,তাদের ২-৩ বছর বয়সে শুরু হয় কোমড়ের নীচে অবস হওয়া, হাত-পা ও আঙ্গুল বাঁকা হয়ে যাওয়া।তার কিছু দিনের মধ্যেই স্বাভাবিক চলাচলের ক্ষমতা হারান সকলেই।পাঁচ জনেরই হাতপা চিকন ও বাঁকা হয়ে গেছে।ফলে তারা কেউই স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করতে পারে না।বড় ভাই সুজন একটি ইলেকট্রনিক হুইলচেয়ার ও চার বোন সাধারণ হুইলচেয়ার ব্যবহার করেন।চার বোনের জন্য তিনটি হুইলচেয়ার থাকলেও দুটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।খাওয়া,গোসল,স্কুলে আসা-যাওয়াসহ সকল কাজে সহযোগিতা করেন চাচা ইসরাইল,মা ফুলবানু আর বড় ছেলে সুজনের স্ত্রী।প্রতিবন্ধী সুজন জানান,আমরা কারোর বুঝা হয়ে থাকতে চাই না,কাজ করে খেতে চাই। পাশাপাশি পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে সংসারের হালও ধরতে চাই।এজন্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।সরকার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিলে আমার পক্ষে সব বাঁধা পেরিয়ে সংসারের সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করা সম্ভব হবে।প্রতিবন্ধীদের চাচা মো. ইসরাইল জানান,আমি তাদের চাচা হলেও তারা আমাকে আব্বা বলে ডাকে।আমার স্ত্রী ও কোন সন্তান নেই।তারাই আমার সন্তান।তাদের বাবা আমার ছোট ভাই মহরম আলী ৮ বছর পূর্বে মারা গেছেন। আমার অবর্তমানে তাদের কে দেখবে?সুজন ও মার্জিয়া অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেছে,তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হলে সংসারের হাল ধরতে পারবে।ছোট তিন বোন কলেজ ও স্কুলে পড়ালেখা করছে।তাদের জন্য মুখে হাসি ফোটাতে সরকার ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার জন্য আকুল আবেদন করছি।বাজিতপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বাবুল মিয়া জানান,তাদের যোগ্যতা বলে একদিন সরকারি বেসরকারি চাকুরি করে মায়ের মুখে হাসি ফুটাবে।সমাজের বোঝা না হয়ে সমাজের অপরিহায়্য মানুষ হয়ে উঠবেন এমনটাই তাদের আশা।বাজিতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারাশিদ বিন এনাম জানান, এক পরিবারের পাঁচজন প্রতিবন্ধী সকলেই ভালোভাবে পড়াশোনা করছে।শত বাঁধা অতিক্রম করে তাদের সম্মানের সাথে এগিয়ে চলার উদাহরণ সাড়া দেশে অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা যোগাবে।সদস্যদের কর্মসংস্থান গড়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সহজ শর্তে ঋণ দেয়া হবে।উপজেলা প্রশাসন সব সময় তাদের পাশে থাকবে।