মোঃ নজরুল ইসলাম,কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
তখনও ভোর,শীতের হালকা কুয়াশায় বাঁশের টুকরি আর কোদাল,কাস্তে হাতে মানুষগুলো ভিড় জমাচ্ছেন ‘মানুষের হাটে’।প্রাচীনকালে ও মধ্যযুগে সমাজে মানুষ কেনাবেচার হাট বসত।সেই দাসপ্রথা বিলুপ্ত হয়েছে কবেই।কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর তথ্যপ্রযুক্তির যুগেও ক্ষুধা আর দারিদ্র্যের নির্মম আঘাতে নিন্ম আয়ের মানুষগুলো দুই বেলা রুটিরুজির জন্য আজও নিজেকে বেঁচে দেন মানুষের হাটে।কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে কটিয়াদী বাস্ট্যান্ড গোল চত্বরের সামনে প্রতিদিন সকালে বসে মানুষ ক্রয়-বিক্রয়ের হাট।রাজমিস্ত্রি,কাঠমিস্ত্রি,রংমিস্ত্রি,স্যানিটারি মিস্ত্রি,দিনমজুরসহ নানা পেশার শ্রমজীবী মানুষে সরগরম হয়ে ওঠে এই বাজার।শ্রমের এই বাজারে শ্রমিক কিনতে আসেন মালিকরা।অনেক শ্রমজীবী বিক্রি হলেও অনেকে থেকে যান অবিক্রীত।কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া ইউনিয়নের বেতাল গ্রামের আফাজ উদ্দিন (৬২) সাথে কথা বলে জানা যায় তার সংসার চালানোর জন্য নিজেকে প্রতিদিন বিক্রি করতে আসেন মানুষের হাটে,কোনো কোনো দিন থেকে যান অবিক্রীত।কোন কোন দিন বিক্রি হন।দিনমজুর রফিকুল ইসলাম (৫৫) এর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘তিন বছর আগে বাড়ি ভেঙে যাওয়ায় ঢাকায় চলে আসি।যখন যে কাজ পাই সেই কাজ করি। সন্তানরা নিজেরাই চলতে পারে না, আমাদের কী দেখবে?তাই প্রতিদিন কামলা দিতে হয়।কামলার হাটে দাম একটু বেশি পাই। কেউ কিনলে, কোনো দিন ৪০০ আবার কোনো দিন ৫০০ টাকা থাকে। বেচা না হলে সেদিন রিকশা চালাই।’কটিয়াদী পৌরসভার বৈথইর এলাকার এক বাড়ির মালিক সুমন (৪৫) মানুষের হাটে এসেছেন রংমিস্ত্রি কিনতে।তিনি বলেন, ‘বাড়ির সামনের দেয়ালে রঙ করতে হবে, তাই এই বাজারে রংমিস্ত্রি কিনতে এসেছি।শ্রমিকের দাম একটু বেশি হলেও এখানে সহজে কাজের লোক পাওয়া যায়।একজন রংমিস্ত্রি নিয়েছি ৫০০ টাকায় আর দু’জন সহকারী মিস্ত্রি নিয়েছি ৮০০ টাকায়।’মানুষের এই হাটে বেচাকেনা চলে ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত। দামদর ঠিক হয়ে গেলে শ্রমজীবী মানুষগুলো রওনা হন মালিকের গন্তব্যে।সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ঘাম ঝরিয়ে কাজ করেন কঠোর পরিশ্রমী মানুষগুলো।কাঠমিস্ত্রি হরিধন হরিধনের জীবনও যেন জড়িয়ে আছে মানুষের হাটের সঙ্গে।পাঁচ বছর ধরে এই বাজারে বিক্রি হতে আসেন তিনি।মিস্ত্রির কাজের মজুরি কেমন জানতে চাইলে মনির বলেন,‘বাজারে মিস্ত্রির দাম ৬০০ টাকা আর শ্রমিক ও জোগালের দাম একটু কম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।’বছরের পর বছর ধরে কটিয়াদী পৌরসদর বাস্ট্যান্ড গোলচত্বরের সামনে এই মানুষের হাট বসে।এ ছাড়াও কটিয়াদী উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় এই মানুষের হাট বসে বলে জানান আচমিতা ইউনিয়নের চারিপাড়া এলাকার এক স্থানীয় বাসিন্দা আকবর(৫০) নামে এক ব্যক্তি।নিয়মিত হাট বসলেও মানুষের হাটে নেই কোনো খাজনা,সমিতির ঝামেলা,হাট কমিটির চাঁদাবাজি। নিজের আপন গতিতেই চলে এই হাট।শ্রমজীবী মানুষরা সেদিক দিয়ে শান্তিতে থাকলেও তাদের কাজের নিশ্চয়তা নেই।হাজারো লোকের ভিতর থেকে মাত্র কয়েকজন বিক্রি হওয়ায় বাকিদেরকে মন খারাপ করে বাসায় চলে যেতে হয়।
প্রধান উপদেষ্টা এডভোকেট মোহাম্মদ সাঈদুল হক সাঈদ শাওন
সম্পাদক ও প্রকাশক : এফ এম আব্বাস উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : ফাহমিদা ইয়াসমিন.
বার্তা সম্পাদক : মিজানুর রহমান.
মফস্বল সম্পাদক : মোঃ সজীব মিয়া.
ঠিকানা : এ এস গন্ধী প্লাজা ৪র্থ তলা জেলা স্বরণী মোড়,কিশোরগঞ্জ।
মোবাইল : ০৯৬৯৭৬৪৮০৩৫, ০৯৬৩৮৯২৩৫২৪,০১৬১৫৩১৮০৩৫
ই-মেইল : auchsangbad@gmail.com