নিজস্ব প্রতিনিধি
এক সময় অবহেলিত জনপদ হিসেবে পরিচিতি ছিল ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার। কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত এই তিনটি উপজেলা আজ অনেকটাই উন্নতি করেছে। লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়াও। সড়ক, সেনানিবাস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-সবই হয়েছে। পর্যটকদের আনাগোনাও বেড়েছে সেখানে। তবে কয়েকটি সেতুর অভাবে উন্নয়নের প্রকৃত সুফল পাচ্ছিল না হাওরবাসী। থাকা-খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকরাও দুর্ভোগ-অস্বস্তিতে ছিল।কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পর্যটন খাতের উন্নতি হলেও এগুলো ছিল অনেকটা অগোছালো। অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে এসব উন্নয়নের প্রকৃত সুফল পাচ্ছিল না হাওরবাসী। কৃষিপণ্য পরিবহণে ঝক্কি, চলাচলের দুর্ভোগ ও পর্যটকদের আবাসন সমস্যায় গতি পায়নি সেখানকার অর্থনীতি। এ পরিস্থিতিতে ওইসব খাত চাঙ্গা করতে হাওরে চলছে ব্যাপক তোড়জোড়। নির্মিত হচ্ছে বেশকিছু সেতু, সড়ক ও পর্যটকদের আবাসনের জন্য সার্কিট হাউজ। আর কয়েকশ কোটির টাকার এই কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।এসব সমস্যা দূর করতে মিঠামইনে পর্যকটকদের জন্য নির্মিত হচ্ছে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মিনি সার্কিট হাউজ। আগামী তিন মাসের মধ্যে ৪তলা সার্কিট হাউজটির কাজ শেষ হবে। এখানে দূর-দূরান্তের পর্যটকরা স্বল্পখরচে আবাসনের সুবিধা পাবেন। এটি নির্মিত হলে হাওরে পর্যটকদের উপস্থিতি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনীতিও বেগবান হবে।তাছাড়া মিঠামইন সদরে ঘোড়াউত্রা নদীতে নির্মণাধীন সেতুটির কাজও শেষের দিকে। ৩৬২মিটার সেতুটি নির্মাণে খরচ হচ্ছে প্রায় ৪৯ কোটি টাকা। এর কাজ শেষ হলে কাজীপুর-খিলপাড়াসহ অন্তত ১০টি গ্রাম সরাসরি যুক্ত হবে উপজেলা সদরের সঙ্গে। সহজ হবে কৃষিপণ্য পরিবহণ, পর্যটক ও শিক্ষার্থীদের চলাচল।মিঠামইন সদরের সানোয়ার মিয়া ও জুয়েল বলেন, ব্রিজটি নির্মিত হলে টিটিসির ছাত্র-ছাত্রীদের নৌকা দিয়ে নদী পার করতে হবে না। আশপাশের ১০টি গ্রামের মানুষ এই ব্রিজ দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে। আমাদের এলাকায় বর্ষাকালে প্রচুর পর্যটক আসে। তারা এসে আমাদের এলাকায় থাকতে পারেন না। যে কয়েকটি জায়গা আছে ওইগুলোতে থাকার মতো ব্যবস্থা হয় না পর্যটকদের। আমাদের এখানে একটা সার্কিট হাউস হচ্ছে। নির্মাণকাজ শেষ হলে অনেকেই এসে থাকতে পারবে।মিঠামইন উপজেলা প্রকৌশলী ফয়জুর রাজ্জাক বলেন, হাওর উপজেলা মিঠামইনে পর্যটনের সম্ভাবনার সূচনা হলেও অবকাঠামোর অভাব থাকার কারণে যে পর্যটকেরা আসতেন তাদের খুবই সমস্যা হয়। বিশেষ করে থাকার ব্যবস্থা, খাওয়া দাওয়া, শৌচাগারের খুব সমস্যা হয়। আমাদের যে রেস্ট হাউসটা নির্মিত হচ্ছে এটা নির্মিত হলে পর্যটকদের খুবই সুবিধা হবে। তাছাড়া হাওরে যে ব্রিজ ও সাবমারসিবল সড়ক তৈরি হচ্ছে সেগুলো দিয়ে অতি সহজেই বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করতে পারছে এবং পারবে।এদিকে ইটনা উপজেলার বর্শিকুড়া এলাকায় ধনু নদীতে নির্মিত হচ্ছে প্রায় শত কোটি টাকার একটি সেতু। ৫৯০ মিটার দীর্ঘ সেতুটির কাজ শেষের দিকে। এটি খুলে দেয়া হলে হাওরের সঙ্গে তাড়াইল, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, হবিগঞ্জের আজিমিরিগঞ্জের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হবে। স্থানীয় লোকজনের চলাচল, কৃষিপণ্য পরিবহন সহজ হবে। স্থানীয়রা বলছেন, পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হতে পাড়ে এই দৃষ্টিনন্দন সেতু।ইটনা উপজেলার বড়শিকুড়া গ্রামের আবুল কাশেম, সৌরভ ও দিদার বলেন, আমরা যে গ্রামে থাকি সে গ্রামে কেউ প্রেগন্যান্ট হলে খুব সমস্যা হতো। যাতায়াতে খুব ঝামেলা হতো। এই ব্রিজটা নির্মিত হলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাবে প্রেগন্যান্ট মহিলারা। আর এই ব্রিজটি হলে এই এলাকায় পর্যটকরা এসে ভিড় করবে বর্ষায়।ইটনার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী ননী গোপাল দাস বলেন, সেতুটি চালু হলে বহু বছরের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে হাওরের লোকজন।অষ্টগ্রামের আব্দুল্লাহপুর ও কলমা ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকার মানুষজনের কাছে বহু বছরের দুর্ভোগের নাম ছিল বিলমাকসা নদী। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন গ্রামগুলোকে অষ্টগ্রাম সদরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সেতু নির্মাণের উদ্যোগ প্রশংসা কুড়াচ্ছে এলাকাবাসীর। এখানে নির্মিত হচ্ছে ৪৫০মিটার দীর্ঘ একটি সেতু। আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ প্রায় ৮০টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন সেতুটির কাজ শেষ হবে। এটি নির্মিত হলে হবিগঞ্জের সঙ্গে অষ্টগ্রামের সরাসরি সড়ক যোগাযোগের সুযোগ তৈরি হবে। উপকৃত হবে কৃষি, মৎস্য ও পর্যটনখাত। পরিবর্তন আসবে মানুষের জীবযাত্রায়ও। দুর্ভোগ কমবে স্থানীয় লোকজনের।