স্টাফ রিপোর্টার:
ময়মনসিংহের শিল্পাঞ্চল ভালুকার মূর্তিমান এক আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছেন ভালুকা পৌরসভা বিএনপির আহবায়ক হাতেম খান ওরফে গুডু হাতেম।স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর ভালুকাকে এক ত্রাশের রাজত্যে কায়েম করেছেন বিএনপির এই নেতা।বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমান দলিয় নেতা কর্মীদের জনগণের ভালোবাসা অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন, অথচ সেই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জুট ব্যবসা দখল,জমি দখল,অন্যনের জমিতে সীমানা প্রাচীর নির্মান, হাটবাজারে চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন এই বিএনপি নেতা।এই নেতার বেপরোয়া কর্মকান্ডের করণে এই অল্প কয়েকদিনে বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন ও জনপ্রিয়তা বেশ কমেছে।এতে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে বিএনপির নিবেদিত কর্মীরা।তারা বিএনপির নেতৃস্থানীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্শণের দাবি জানান।সম্প্রতি ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির নতুন আহবায়ক কমিটিতে সদস্য সচিব পদে রোকনুজ্জামান সরকার রোকন নির্বাচিত হওয়ার পর আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন হাতেম।সে প্রকাশ্যে সবার সামনে বলে যে, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আমি রোকনুজ্জামান সরকার রোকনকে সদস্য সচিব করে এনে দিছি।জেলার নেতারা আমার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।আমি যা বলবো তারা তাই মানতে বাধ্য।তার এসব দাম্ভিকতা ও টাকার বিনিময়ে কমিটি এনে দেওয়ার কথা বলার কারণে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছেন বলে বাদি করছেন তৃণমূলের নিবেদিত কর্মীরা। বেপরোয়া হাতেমকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্শণ করেন বিএনপি সমর্থক ও কর্মীরা।একসময় থানায় দালালী করা হাতেম এখন শত কোটি টাকার মালিক।স্বারিরিক গঠনে একটু খাটো হওয়ায় স্থানীয়রা তাকে গুডু হাতেম বলে সম্ভোধন করেন।একাধিক সূত্রে জানা যায়,নিজে বিএনপি নেতা হয়ে আওয়ামীলীগের শাসনামলে আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে মিলে মিশে দালালী ও শিল্পপতিদের ব্লাকমেইল করে হয়েছেন কোটিপতি। বিএনপির কোন আন্দোলন সংগ্রামে তাকে মাঠে পাওয়া না গেলেও আওয়ামী সরকারের পতনের পর তিনি হয়ে উঠেছেন স্থানীয় বিএনপির নীতি নির্ধারক। ১৬ বছর আওয়ামী সরকারের জুলুম নির্যানের স্বীকার হয়েছের ভালুকার হাজার হাজার বিএনপি নেতা কর্মী কিন্তু হাতেম খান আওয়ামীলীগের নেতাদের সাথে মিশে সব সময়ই রয়েছেন অধরা। বিএনপির নেতা কর্মীদের নামে একের পর এক মামলা হামলা হলেও তার নামে গত ১৬ বছরে একটি মামলাও নেই। বিগত আওয়ামীলীগ আমলে তিনি সাবেক এমপি কাজিম উদ্দিন আহাম্মেদ ধনুর বিশ্বস্থ সহচর হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ধনুর ভাগিনা ফজলুল আমীন লিটনের বাজার সমিতির নির্বাচনের অন্যতম সমন্বয়াক ও পৃষ্টপোষক ছিলেন হাতেম খান। সাবেক এমপি ধনুর সাথে তার সখ্যতার বিষয়টি ভালুকায় সর্বজনবিদিত।স্থানীয় একাধিক সূত্রে আরও জানা যায়, বর্তমানে কোটিপতি এই হাতেম খান একসময় দিন অনতে দিন খেয়ে চলতো। থানায় দালালী করা ছিলো তার একমাত্র পেশা। থানায় দালালী করার সময় পরিচয় হয় বাদশা গ্রুপের মালিক বাদশা মিয়ার সাথে। তার পর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি হাতেম খানকে। সরল মনের শিল্পপতি বাদশা মিয়াকে দিয়ে বিতর্কিত জমি ক্রয় করিয়ে তাকে ব্লাকমেইল করতো হাতেম। বলতো বিভিন্ন দপ্তরে টাকা না দিলে আপনার নামে মামলা হবে। বাদশা গ্রুপের কিছু অসাদু কর্মকর্তা, বন বিভাগের কর্মকর্তা ও ভূমি অফিসের কিছু অসাদু কর্মকর্তাদের নিয়ে বড় একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেন সে। পরে ওই সিন্ডিকেটকে সাথে নিয়ে হাতেম নানা রকম নাটক সাজিয়ে ভয় দেখিয়ে বাদশা মিয়ার কাছ থেকে হাতিয়ে নিতো কোটি কোটি টাকা। নামমাত্র টাকা ভাগবাটোয়ারা করে বাকি টাকা রেখে দিতো নিজের পকেটে। বিভিন্ন রকম নাটক সাজিয়ে এক জমি কয়েকবার ক্রয় করানো হয়েছে বাদশা মিয়াকে দিয়ে। বনের কর্মকর্তা ও ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা হাতেমের শেখানো কথা বলতো বাদশা মিয়াকে। এসব নাটকের মুল নায়ক হাতেম খান। এভাবে শিল্পপতি বাদশা মিয়াকে একের পর এক ব্লাকমেইল করে নিজে কোটিপতি বনে যান হাতেম খান। ভালুকা বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে তার কয়েকশত কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে জানা গেছে। দৃশ্যত কোন ব্যবসা না করে এতো টাকার মালিক হওয়াকে স্থানীয়রা অঙ্গুল ফলে কলাগাছ হিসেবে অখ্যায়িত করছেন। এসব টাকার উৎস খতিয়ে দেখার জন্য দুদকের দৃষ্টি কামনা করেন স্থানীয় সচেতন মহল।সবশেষ ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও ভালুকা উপজেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক ফখর উদ্দিন আহাম্মেদ বাচ্চুকে দল থেকে বহিষ্কার করানোর নেপথ্যের কারিগর হিসেবে এই গুডু হাতেমকেই দায়ি করছেন তৃণমূলের বিএনপি কর্মীরা। কেননা স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর ভালকায় শিল্প কারখানা দখলের উৎসবে মাতেন ভালুকা পৌর বিএনপির এই আহবায়ক। তিনি ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও ভালুকা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ফখর উদ্দিন আহাম্মেদ বাচ্চুকে ভুল বুঝিয়ে ভালুকা এন্টারপ্রাইজ নামে নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের প্যাডে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে ডিও লেটার পাঠানো শুরু করে এই হাতেম। ফলে শিল্প নগরী ভালুকা অল্প কয়েকদিনের ব্যাবধানে হয়ে উঠে ত্রাসের নগরী। হাতেমের দখলদারি ও বেপরোয়া কর্মকান্ডের বলি হয় ভালুকা উপজেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক ফখর উদ্দিন আহাম্মেদ বাচ্চু। হাতেমের বেপরোয়া কর্মকান্ডে বিএনপি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মনে নেতিবাচক ধারণা জন্মাতে শুরু করে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমান্ডেও আলোচনা হয় ভালুকার রাজনীতি নিয়ে। ভালুকা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ফখর উদ্দিন আহাম্মেদ বাচ্চুর কাদে বন্দুক রেখে নিজের আখের গোছানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলো হাতেম খান। ৫ ই আগষ্টের পর হাতেম খানের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি শিল্প কারখানার জুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়েছে। দখল নেওয়া এসব প্রতিষ্ঠানের মাঝে রয়েছে কনজুমার নিটেক্স, শেফার্ড গ্রুপ, এলজি বাটারফ্লাই, স্কয়ার টেক্সকম, সানি ফিড, ইনডেক্স ফিড। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের জুটের ব্যবসা থেকে অর্জিত অর্থ দলের নিবিদিত কর্মীদের না দিয়ে তার বিশ্বস্থ কর্মী ও আসন্ন পৌর নির্বাচনে তিনি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার জন্য কাজ করা নিজ বলয়ের নেতা কর্মীদের মাঝে বিতরণ করেন। এতেও জেল-জুলুম, মামলা-হামলার শিকার হওয়া কর্মীরা ক্ষুব্ধ।তবে বিএনপির তৃণমূলের নেতা কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিযোগ করেন, দখলবাজী করলেন হাতেম আর বহিষ্কিৃত হলেন ফখর উদ্দিন আহাম্মেদ বাচ্চু। কিন্তু এখনও বহাল তবিয়তে আছেন হাতেম খান।হাতেম খান ৫ই অগষ্টের পর তার নেতৃত্বে বিশাল এক গুন্ডা বাহিনা গড়ে তুলেন এই গুন্ডা বাহিনির নেতৃত্বে রয়েছেন ভালুকা উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রকিবুল হাসান রাসেল। প্রত্যাশ্য মিছিলে যুবদলের কর্মীদের লাথি দেওয়ার একটি ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে। তাছাড়া হাতেমের সহযোগীতায় রাসেল ধলিয়া এলাকার মৎস খামারিদের খামার থেকে মাছ ধরে বিক্রি করে দেওয়াসহ ইকরাম সুয়েটার, রাসেল স্পিনিং মিল ও সুলতানা সুয়েটারের জুট ব্যবসা দখলের অভিযোগ রয়েছে। ভালুকা বাজার থেকে চাঁদাবাজী করে সেনাবাহিনীর তৎপরতায় সেই চাঁদাবাজীর টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয় রাসেল। তাছারা এই রাসেল হাতেম খানের ইন্দনে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এজাদুল হক পারুলের বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করেন। হাতেম খানের বাহিনীর অপর এক শক্তি ছিলো ভালুকা পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব আদি খান শাকিল। হাতেমের নির্দেশে আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গির আলম আদি খান শাকিলকে সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন।হাতেম খানের নির্দেশে পৌরসভার খারুয়ালী এলাকার গ্লোরি টেক্সটাইলের জুট ব্যবসা নিয়ত্রণের জন্য জুটের গাড়ি ছিনতাইয়ের অভিযোগ রয়েছে। গত ১১ নভেম্বর হাতেম খানের নির্দেশে তার ভাই শাহাব উদ্দিন ও স্থানীয় কয়েকজনের নেতৃত্বে জুট ভর্তি গড়ি ছিনতাই করা হয়েছিলো। পরে সেনাবাহীর তৎপরতায় গাড়ি ফরৎ দিতে বাধ্য হয়।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিএনপি নেতা বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ অমান্য করে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জুট ব্যবসা দখল, জমি দখল, অন্যনের জমিতে সীমানা প্রাচীর নির্মান, হাটবাজারে চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারে বেপরোয়া কর্মকান্ডে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপরাধে হাতেম খানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হোক। অন্যথায় সাধারণ মানুষের মনে যে ক্ষোভের জন্মেছে তা দলের জন্য ক্ষতিকর।ভালুকা সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা বলেন, হাতেম খানের বেপরোয়া কর্মকান্ডে ভালুকা পৌরসভাসহ গোটা উপজেলার মানুষ অতিষ্ট। সামান্য ক্ষমতা পেয়ে হাতেম যে পরিমান বেপরোয়া হয়েছেন তিনি ভালুকা পৌরসভার মেয়র হতে পারলে যে কতো ভয়ংকর ও বেপরোয়া হবেন সেটা ভালুকার মানুষ বুঝে গেছে।ভালুকা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ হামিদ ক্বারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,হাতেম খানের কর্মকান্ডে ভালুকার বিএনপির নেতা কর্মীরা বিব্রত।তার বেপরোয়া কর্মান্ড ও দখলবাজির কারণে বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।বেপরোয়া হাতেমকে না থামালে দিন দিন বিএনপির জনপ্রিয় আরও কমবে।এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে ভালুকা পৌর বিএনপির আহ্বায়ক হাতেম খান বলেন, আমার জীবনে কোনও দুর্নীতি কিংবা অপরাধ নেই। আমি চাঁদাবাজি কিংবা কোনও দখলবাজির সঙ্গে জড়িত নই। ৫ আগস্টের পর আমার দলের অনেকে দখল এবং চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েন।তাদের আমি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছি। তবে অনেকে ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে আমার বিরোদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে।অনেকে মেয়র হতে চায়।দলীয় কোন্দলের সুযোগ নিয়ে নিজের লোকজন দিয়ে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ করাচ্ছে।তবে এসব কিছু মিথ্যা ও বানোয়াট।শত কোটি টাকার মালিক হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি ভালুকায় শিল্পকারখানা বাদশা গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছি।এই গ্রুপের জমি কেনাবেচাসহ বিভিন্ন বিষয় আমি দেখি।এখানকার অর্থই আমার আয়ের মূল উৎস।আমার আয়কর ফাইল আছে।প্রতি বছর আয়কর দিয়ে থাকি।
প্রধান উপদেষ্টা এডভোকেট মোহাম্মদ সাঈদুল হক সাঈদ শাওন
সম্পাদক ও প্রকাশক : এফ এম আব্বাস উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : ফাহমিদা ইয়াসমিন.
বার্তা সম্পাদক : মিজানুর রহমান.
মফস্বল সম্পাদক : মোঃ সজীব মিয়া.
ঠিকানা : এ এস গন্ধী প্লাজা ৪র্থ তলা জেলা স্বরণী মোড়,কিশোরগঞ্জ।
মোবাইল : ০৯৬৯৭৬৪৮০৩৫, ০৯৬৩৮৯২৩৫২৪,০১৬১৫৩১৮০৩৫
ই-মেইল : auchsangbad@gmail.com