নিজস্ব প্রতিবেদক
সমাজের প্রত্যেক মানুষেরই কথা বলার স্বাধীনতা থাকতে হবে।আমাদের তো অনেক স্বপ্ন ছিল,অনেক আশা ছিল। দেশে গণতন্ত্র থাকবে,স্বাধীনতা থাকবে,সুখ থাকবে,বিশুদ্ধ সংস্কৃতি থাকবে,ন্যায়বিচার থাকবে,অধিকার থাকবে, মানবাধিকার থাকবে,সৃজনশীলতা থাকবে,থাকবে বাক্স্বাধীনতা।রাষ্ট্র খাদ্য,আশ্রয়,শিক্ষা,চিকিৎসা,বস্ত্র,বিনোদনের ব্যবস্থা করবে।আজ আমাদের প্রকৃত স্বাধীনতার অধিকার কোথায়? মুক্তচিন্তা,প্রগতিশীলতা,যুক্তিশীলতা প্রতিহিংসা, পীড়ন,মিথ্যাচার,প্রতিশোধ,দমন,দখল,হিংসা কেন আমাদের কুরে কুরে খাচ্ছে,কেন এসব অনুষঙ্গ হচ্ছে নিত্যঘটনা? মানবতা কমছে,দেশ কেন বন্দিশিবির হচ্ছে? কথা বললেই বিদ্রোহ বানানো,বিদ্রোহী বলা কি আইনে পরিণত হয়েছে? মানুষের জন্য কি ভালো কিছু নেই? আলোচনা নেই,সহনশীলতা নেই,সুখবর নেই।বড় বড় প্রকল্পই কি উন্নয়ন,বড় বড় প্রকল্পই কি সুখ,শান্তি,গণতন্ত্র, মানবতা,মুক্তিচিন্তার কথা বলে?আমরা তো এ অমানবিক বন্দিশিবির চাই না,এ মানুষের সৃষ্ট নরক চাই না,চোর-ডাকাতের নগর,গ্রাম,পাড়া,জনপদ চাই না।দূষিত বায়ু চাই না,চোরের অফিস,প্রশাসন চাই না,লুটপাটের সচিবালয় চাই না,চাই না লুটের ব্যাংক,বিমা,আদালত।আমরা চাই বাকস্বাধীনতা,বিজ্ঞানমনস্কতা,মানবিকতা,নির্মল আকাশ, উর্বর মাটি,নদীর প্রবাহ,উন্মুক্ত প্রান্তর,মুক্তজীবন,বিশুদ্ধ সাংস্কৃতিক চর্চা,ন্যায্যতার সমাজ,ভদ্রতার রাজনীতি,অগ্রসরমান অর্থনীতি।পত্রিকার পাতা উলটালেই আমাদের মন খারাপ হয়।ধর্ষণ,ছিনতাই,দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি,সচিবালয় থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত দুর্নীতির সংবাদ, লুটপাটের ফিরিস্তি,টাকা লুট,স্বজনপ্রীতি,হত্যা,লুণ্ঠন,দূষণ, ভেজাল জীবনকে বিষিয়ে তুলে।রাজনীতিবিদ,আমলা,ব্যবসায়ী,সেনাপতি,পুলিশপতি,শিল্পপতি,বুদ্ধিজীবী,শিক্ষক,ডাক্তার,প্রকৌশলী,বিচারক,সবাইকে দেখলে কেন জানি অসৎ মনে হয়,স্বার্থপর মনে হয়, অযোগ্য লাগে,অথচ কত প্রত্যাশা ওদের কাছে।কত আশা নিয়ে মানুষ বিচার চাইতে আসে।আমার বেড়ে ওঠা,শিক্ষা গ্রহণ,সবকিছুতেই দেশ,সমাজ সহযোগিতা করেছে।তাই তো দেশের প্রতি দায়িত্ব আছে,কর্তব্য আছে,ভালোবাসা আছে,দেশপ্রেম আছে,ইচ্ছা করলেই আমি আমার জন্মকে বাতিল করে দিতে পারি না।অন্য দেশে চলে যেতে পারি না,অন্য গ্রহে যেতে পারি না।সব ভুলে যেতে পারি না।এ দেশে থেকেই,দেশকে ভালোবেসেই, দায়িত্ব পালন করেই জীবনকে পাড়ি দিতে হবে।আমি তো কারও তাঁবেদারি করি না,তেল দিই না,পা চাটি না,অন্যের টাকা চুরি করি না,লোভ করি না,সৃষ্টিশীলতা ধ্বংস করি না,প্রতিহিংসা করি না,অন্যের ক্ষতি করি না,মুক্তচিন্তা করি,বর্বরতাকে ঘৃণা করি,অমানবিক হই না,পীড়ন,দূষণ,দখল করি না।সাদাসিধে জীবনযাপন করি, সাধারণ খাবার খাই।সকালে ঘুম থেকে উঠে চিরতার পানি খাই,মাটির গন্ধ শুঁকি,গ্রামের বিষমুক্ত সাদাসিধে খাবার খাই।তারপরও আমরা কেন অসুস্থ হয়ে পড়ি,অসুস্থবোধ করি।শান্তি পাই না,সুখ লাগে না, অসহ্য যন্ত্রণা কেন আমাদের কাঁদায়, ভাবিয়ে তোলে?
আমার সন্তান কেন রাস্তায় বেরোলেই অসমতা দেখে, হয়রানির শিকার হয়? বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে গিয়ে কেন অন্যায়ে বিরুদ্ধে, ধর্ষণের বিরুদ্ধে মানববন্ধনে দাঁড়াতে হয়? রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিরাপদ সড়কের আইন শেখাতে হয় কর্তাব্যক্তিদের, কেন অনিরাপদবোধ করে?আমি কি সব নেগেটিভভাবে চিন্তা করি? আমি ভালোবাসতে জানি না? আমার হৃদয় বলে কি কিছু নেই, আমি কি পাখির গান শুনতে ভালোবাসি না, সকালের ভোর দেখি না, বৃষ্টির শব্দ শুনি না, আনন্দ পাই না, ঘাসের শিশির বিন্দু দেখে পুলকিত হই না, আমার মাঝে দেশপ্রেম নেই? আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি, এ কথা কি বলতে পারি না? তারপরও কেন যেন ভালো লাগে না দেশের চেহারা দেখে, পরিস্থিতি দেখে।যার কাছে ক্ষমতা, সেই অপব্যবহার করছে। তারা সবাই মনে করে ব্যাংক তাদের, অফিস তাদের, নিয়োগ তাদের পকেটে। নদী, জলাভূমি, রাস্তাঘাট, ফুটপাত, বন, পাহাড়, ক্ষমতা, আইন, আইনসভা, পদ-পদবি, ভর্তি, প্রশ্ন সব তাদের উৎপাদিত পণ্য। ইচ্ছা করলেই মজুত করতে পারবে,বিক্রি করতে পারবে।পুরো দেশ তাদের সম্পত্তি।যা বলে,তাই আইন,যা করে তাই আইন,সংবিধান তাদের নিজের, ইচ্ছা হলেই সংশোধন করে, দায়মুক্ত আইন করে,ইনডেমনিটি করে। প্রয়োজনে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য সংবিধান কাটাছেঁড়া করে।আমাদের গর্বের ধন,সত্য-সুন্দর একট শব্দ স্বাধীনতা ও ভাষা আন্দোলন।আর সব যেন মিথ্যা, মেকি,হিংসাভরা,রক্তাক্ত,প্রতারণা।এ স্বাধীন দেশে এখন থাকতে ভয় লাগে,কষ্ট হয়।রাষ্ট্র মিথ্যাচার শেখায়,দুর্নীতি, প্রতারণা,চুরি,দালালি,বর্বরতা,দাম্ভিকতা,সন্ত্রাস,মৌলবাদ শেখায়।শেখায় টাকা চুরি করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে। আগে ইংরেজরা লুট করে নিয়ে যেত,এখন আমার দেশের সোনার ছেলেরা লুট করে,পাচার করে বিদেশ নিয়ে যায়। সবাই যেন হুজুরের দলে,সবাই যেন টকশোজীবী,শেখাতে পারে না,দলবাজি করে,জ্ঞানের কথা বলে না,জ্ঞানের চর্চা করে না। ধার্মিকের কথা শুনলে সন্দেহ হয়।মন্ত্রীর কথা শুনলে সন্দেহ হয়,সচিবের কথা শুনলে সন্দেহ হয়।দ্বিমত প্রকাশের সুযোগ নেই।যেখানে দ্বিমত প্রকাশ করতে পারে না,সেখানে স্বৈরতন্ত্র গড়ে ওঠে।দ্বিমত প্রকাশ করলেই আমি বিদ্রোহী হয়ে যাই।দ্বিমত ছাড়া উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়।
চার মূলনীতি নিয়ে বাংলাদেশের সংবিধান তৈরি হয়েছিল। জাতীয়তাবাদ,গণতন্ত্র,সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। আমরা ভেবেছিলাম গণতন্ত্র,সমাজতন্ত্র মিলে তৈরি হবে বাংলাদেশ।হবে আধুনিক বাংলাদেশ,নিরাপদ অর্থনৈতিক মুক্তির বাংলাদেশ,বাকস্বাধীনতার বাংলাদেশ,মুক্তচিন্তার বাংলাদেশ,আমাদের অর্থনীতি হবে সমাজতান্ত্রিক,মানুষ শোষিত হবে না,বাংলাদেশ হবে ন্যায্য বিচারের,কেউ বঞ্চিত হবে না,একদল পুঁজিবাদী দেশ লুটে খাবে না।