নিজস্ব প্রতিবেদক
কিশোরগঞ্জ ছাড়াও ঢাকা,চট্টগ্রাম,সিলেটসহ দেশের নানা প্রান্তের পাইকাররা পিকআপ,ট্রাক করে বাজারে সবজি নিয়ে আসেন।বর্তমানে লাউ,ডাটা,বেগুন,ঝিঙা,পটল, কাফরোল,চিচিংগা,ধুন্দুল,করল্লা,কাঁচামরিচসহ বিভিন্ন জাতের সবজি ও শাক পাওয়া যাচ্ছে।এসব সবজি একেবারে টাটকা হওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁক-ডাকে সরগরম হয়ে ওঠে।তবে,গত কিছুদিন ধরে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ক্রেতা-বিক্রতাদের মধ্যে হতাশা লক্ষ্য করা গেছে।
ভোরের আলো ফোটার আগেই ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁক-ডাকে সরগরম হয়ে ওঠে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের বড়বাজার।শুধু তাই নয়,প্রতিদিন এই বাজারে কোটি টাকার সবজি বিক্রি হয়।বৃহত্তর চর এলাকার সবজি নিয়ে ভোর হওয়ার আগেই এই বড়বাজারে জড়ো হন কৃষকেরা।বাজারটিতে বিভিন্ন ধরনের টাটকা সবজির পসরা বসে।
জানা গেছে,প্রায় ১৫০ বছরের পুরোনো এ বাজারে প্রতিদিন ভোর থেকে ৯টা পর্যন্ত পাইকারি দরে সবজি বেচাকেনা হয়।ভরা মৌসুমে বাজারে প্রতিদিন ৮০ থেকে ১ কোটি টাকার সবজি বেচাকেনা হয়।বাজারের ৫০টি আড়তের মাধ্যমে এসব সবজি বেঁচাকেনা হয়ে থাকে।
স্থানীয়রা জানান,প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত সবজি কেনা বেচায় সরগরম থাকে এ বাজারে।জেলার বিভিন্ন এলাকারসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে উৎপাদিত নানা জাতের সবজির দেখা মিলে এ ১৫০ বছরের পুরোনো বড়বাজারটিতে।যাতায়াত ব্যবস্থা ভাল থাকায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে এ বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন।
সরেজমিনে সকালে গিয়ে বড়বাজার এলাকায় সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়,ভোরের আলো ফোটার আগেই দূর-দূরান্তের কৃষকরা ট্রাক,পিকআপ,অটোরিকশাসহ ছোট ছোট যানবাহনে করে পুঁইশাক,কলমি,শাক,লাল,শাক,পালং শাক,ঢেঁড়স,ধুন্দল,চিচিঙ্গা,বরবটি,ফুলকপি,বাঁধাকপি,শিম,শালগম ও নতুন আলু,বেগুন,গাজর,মুলা,মিষ্টি কুমড়া,লাউ,ধনেপাতা ও বরবটিসহ আরও বিভিন্ন রকমের টাটকা সবজি বাজারে নিয়ে আসছেন বিক্রির জন্য।স্বল্পমূল্যে পাইকারি দরে এইসব সবজি কিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ আশপাশের জেলায় নিয়ে যাচ্ছে খুচরা ব্যবসায়ীরা।তাই সকাল থেকেই মুখর বড়বাজার এলাকার এ বাজার।
বড়বাজারের ব্যবসায়ী হাইয়ুল করিম বলেন,প্রায় দেড়শ বছর ধরে আমাদের এই সবজির বাজার। সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়ে সকাল ৯টা পর্যন্ত বাজার চলে।দেশীয় সবজি এখানে পাওয়া যায়।ঢাকা, চট্টগ্রাম,সিলেট থেকে আমাদের এখানে ক্রেতা-বিক্রেতা আসে।
সবজি বিক্রি করতে আসা কৃষক মোঃ রহিম মিয়া বলেন,‘যুগ যুগ ধরে চলে আসা প্রসিদ্ধ এ বাজারটি এখনও তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।তবে পাকুন্দিয়া উপজেলার তারাকান্দি ও বাজিতপুরের পিরিজপুর এলাকায় একই সময় বাজার বসায় এ বাজারে বাইরের সবজির আমদানি ও পাইকার অনেক কমে গেছে’।
বাজার মনিটরিংয়ে থাকা পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক অলিউল্লাহ অলি বলেন,বড়বাজারে ব্যবসায়ীদের কোনো সিন্ডিকেট নেই।দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন ও বাজার কমিটিকে সাথে নিয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছে।
বড়বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. খাইরুল ইসলাম বলেন,বড়বাজারে আশপাশের জেলাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে কাঁচামাল আসে।শতাব্দী প্রাচীন এই বাজারে কোনো চাঁদাবাজ,সিন্ডিকেট নেই বিক্রেতারা ক্রেতার কাছে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করতে পারে।এই বাজার থেকে কিশোরগঞ্জসহ আশপাশের জেলার খুচরা ব্যবসায়ীরা সবজি কিনতে আসে।
বড়বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিলু বলেন,ভোর থেকে সকাল ৯টা -১০টা পর্যন্ত বড়বাজারের কাঁচাবাজারে কোটি টাকার উপর বেচাকেনা হয়।পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে নিয়মিত মনিটরিং করা হয় হয় সমিতির পক্ষ থেকে। তিনি আরো বলেন,বাজারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রয়েছে। পুরো বাজার জুড়ে সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ করা হয় তাছাড়া চুরি,ছিনতাই রোধে নিরাপত্তা প্রহরীরা দায়িত্ব পালন করছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান,বড়বাজার একটি প্রাচীন বাজার। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজি এখানে বিক্রি করেন।সবজি উৎপাদনে আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি এবং প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।কৃষকরা আমাদের কথা শুনে নিরাপদ সবজি উৎপাদন করছে এবং ভাল দাম পাচ্ছে।বাজারটিতে সবজির ভাল চাহিদা রয়েছে।