এই বিষয়টি নিয়ে দুটি কথা জিজ্ঞাসা করতে চাই, তাদের উদ্দেশ্যে যারা “হিজরী নববর্ষ” উপলক্ষে মনের আনন্দে পারস্পরিক শুভেচ্ছা এবং মোবারকবাদ বিনিময় করে থাকেন। এই শোকাবহ মহররমে আপনাদের হিজরী নববর্ষের মোবারকবাদ গ্রহণ করতে পারলাম না। তবে আপনাদের জিজ্ঞেস করতে চাই কিসের মোবারকবাদ জানাচ্ছেন? নবুয়তের ঘর লুট করার মোবারকবাদ? তিনদিনের পিপাসার্ত নবীবংশকে প্রকাশ্য দিবালোকে জ”বাই করার মোবারকবাদ? রাসূলে খোদার ঘরের বাচ্চাদের হ”ত্যা করার মোবারকবাদ? রাসূলে খোদার বংশের নিতর দেহের(লাশ) উপর ঘোড়া দৌড়ানোর মোবারকবাদ? জান্নাতের সম্রাজ্ঞী মা ফাতেমার (আঃ) এর ফুলের বাগান তছনচ করার মোবারকবাদ ! কি কারণে এই মোবারকবাদ? কি কারণে?
আদমের (আঃ) তাওবাহ কবুল হয়েছিল, নূহের (আঃ) নাজাতের তরী জুদী পর্বতে ভীড়েছিল, মূসা (আঃ) ফেরাউনের কবল থেকে মুক্ত হয়েছিলেন, আড়াই (২,৫০০) হাজার নবী এই দিনে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন!! এসকল কাহিনী মনে রাখলেও তোমরা মাওলা ইমাম হোসাইনকে ভুলে গেলে? তোমরা ৬ মাসের আলী আসগরকে (আঃ) ভুলে গেলে? ১৮ বছরের আলী আকবরের (আঃ) কথা ভুলে গেলে? যে ঘরে পর্দা কায়েম হয়েছে—মা ফাতেমার (আঃ) এর কন্যা যয়নবকে (আঃ) পর্দাহীন করে গলিতে-গলিতে ঘুরানোর কথা ভুলে গেলে? ভুলে গেলে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় হ”ত্যা করা মজলুমদের কথা যারা হায় তৃষ্ণা, হায় তৃষ্ণা বলে চিৎকার করে কেঁদেছিল?
তোমাদের এখনো আহলে বাইতের প্রতি রহম আসলো না?কেমন মুসলমান তোমরা? রাসূলে খোদার কলেমা পড়ো অথচ তাঁর আহলে বাইতের প্রতি বিন্দু পরিমান মুহব্বত নেই! যে জুলুম বনি ইসরাঈলরা তাদের নবীদের প্রতি করেছে ঐ জুলুম তোমরা রাসূলে খোদার আহলে বাইতের প্রতি করেছ! শুনো পাষানির দল! রাসূলে খোদা হিযরত মুহাররমের পরে রবিউল আউয়াল মাসের প্রথম রাত্রিতে হয়েছিল। যে রাত্রিটি ইসলামের ইতিহাসে ‘লাইলাতুল মাবিত’ নামে পরিচিত। তিনি ১২ রবিউল আউয়াল মদীনায় পৌঁছেন। হিজরতের দিনটি কখনোই নবীজীর জন্য আনন্দময় ছিলোনা। ঐ দিন নিজ মাতৃভূমি থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে মদীনা গমনের সময় মহানবী অশ্রুসিক্ত নয়নে মক্কার দিকে বারবার ফিরে তাকাচ্ছিলেন! নিজের পরিবারবর্গ, আত্মীয় স্বজন ও মাতৃভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নবীজীর মনে কী সত্যিই আনন্দ ছিলো!?
মহররম মাসকে ঘিরে যত রূপকথার গল্প প্রচলিত রয়েছে তার প্রত্যেকটাই উমাইয়া ফ্যাক্টরিতে তৈরী ভেজাল প্রডাকশন। মূলত হিজরী নববর্ষে আনন্দ বা শুভেচ্ছা বিনিময়ের দু’টি কারন। একটা প্রকাশ্য কারন এবং অন্যটা অন্তর্নিহিত কারন। প্রকাশ্য কারনটা হচ্ছে এই মাসে এক সঙ্গে পুরা নবীবংশকে ক”তল করে ফেলা সম্ভব হয়েছিল; আর অন্তর্নিহিত কারনটা হচ্ছে অতীতে আহলে বাইতের আকা স্বয়ং রাসূলে খোদাকেই তাঁর ভিটা-মাটি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে স্বদেশ ছাড়া করার বিজয় আনন্দ। উপরন্তু, আরবী নববর্ষের আনুষ্ঠানিকতার ডামাডোলে ১০ই মহরমের বিষাদময় কারবালা ট্র্যাজেডিকে আড়াল করার গভীর ষড়যন্ত্র!
ওহে নরাধমের দল ! কান খুলে শুনে নিন। যতই চেষ্টা করিস,কোন লাভ নাই। এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়! তোমরা ক্ষমতার লোভে যা খুশি তাই করতে পারো। তোমরা ক্ষমতার লোভে রাসূলে খোদার জানাজাও ছেড়ে দিয়েছিলে, তোমরা ক্ষমতার জন্য মা ফাতেমা (আঃ) এর ঘরে আ”গুন দিয়েছো। তোমরা লা”থি মেরে তাঁর গর্ভের সন্তানকে হ”ত্যা করেছো, তোমরা মাওলা আলীকে রশি দিয়ে বেধে টেনে নিয়ে গেছো! তোমরাই ক্ষমতার লোভে হাসান (আঃ) কে বিষ দিয়ে হ”ত্যা করেছো! তোমরাই হ”ত্যা করেছো মাওলা হুসাইন (আঃ) কে এজিদের পক্ষ নিয়ে! এ আর নতুন কি? এটাই তোমাদের বাপ দাদার শিক্ষা। আমরা মোটেই অবাক নই যে, তোমরা মাওলা ইমাম হুসাইন (আঃ) এর শাহাদাতের মাসে জশন পালন করবে! আমাদের অন্তর থেকে কখনও কারবালাকে মুছে ফেলতে পারবেন না।এটা স্বয়ং আল্লাহর কাছে ওয়াদা করা।
“—তারা আল্লাহর জ্যোতিকে ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে ফেলতে চায় । কিন্ত আল্লাহ তাঁর জ্যোতি পূর্ন করবেনই , যদিও অবিশ্বাসীরা তা অপছন্দ করে—” ।
—সুরা – সাফফ / ৮ ।
ওহে লানত প্রাপ্ত দল ! হাশরে মাঠে রাসূলে খোদার সামনে মাবুদের দরবারে কি করে মুখ দেখাবে? যাকে প্ৰাণের চেয়ে মহব্বত করতেন, যার একটু কান্না শুনলে সহ্য করতে পারতেন না, সেই মাওলা ইমাম হুসাইন (আঃ) মর্মান্তিক, নির্মম, নৃশংসভাবে কারবালার ময়দানে শহীদ হলেন। যাঁদের শহাদাত-মুসিবতের কথা স্মরণে স্বয়ং রাসূলে খোদা কেঁদেছেন,কোন মুসলমান কি সেই মহররমে আনন্দ-উৎসব করতে পারে? বুকে হাত দিয়ে বলুন তো, কোন মুসলমান কি সেই মহররম মাসে আনন্দ-উৎসব করতে পারে ? কি মনে হয় আপনার!? গভীর রাতে একাকী নিরিবিলিতে শুয়ে চোখ বন্ধ করে বিবেককে জিজ্ঞেস করে জানাবেন। ততক্ষণ পর্যন্ত অধম পাগলা আপনার উত্তরের অপেক্ষায় রইলো ভাই।