আমরা সাধারণ তিনটি নববর্ষের সাথে অতিব পরিচিত। ইংরেজি নববর্ষ হলো জানুয়ারি মাস, বাংলা নববর্ষ হলো বৈশাখ মাস এবং আরবী নববর্ষ হলো মহরম মাস। ইংরেজি নববর্ষ শুরু হয় হযরত ঈসা (আঃ) এর শুভ জন্মদিন উপলক্ষে থেকে। তাই খ্রীষ্টানরা আনন্দ উৎসব করে থাকে। আবার বাংলা নববর্ষ আমাদের গ্রাম বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্যের প্রতীক মাস। বৈশাখ মাসে নতুন ধান গোলায় উঠে এবং পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে। তাই বাংলা নববর্ষকে আমরা মহা ধুমধামে পালন করি। আর আরবী সাল গণনা করা হয় রাসূল পাক (সাঃ) যেদিন কাফেরদের অত্যাচারে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করে সেদিন থেকে। আরবী মাসের প্রথম মাস মহররম।
এই মহররম মাসের ১০ তারিখে পাক পাঞ্জাতনের অন্যতম সদস্য মাওলা ইমাম হোসাইন এজিদি বাহিনীর হাতে নির্মম হ”ত্যাকান্ডের শিকার হন। মাওলা ইমাম হোসাইন শুধুমাত্র আমাদের মতো পাপীতাপীদের মুক্তির জন্য শহীদ হন। যে মুসলিম জাতির জন্য মাওলা ইমাম হোসাইন মহররম মাসে শহীদ হলেন। সেই মহররম মাসে আমরা নির্বোধ মুসলিম জাতি কিভাবে শুভেচ্ছা, অভিনন্দন ও আনন্দ করতে পারি? যে মাওলা ইমাম হোসাইন আমাদের নাজাতের জন্য স্বইচ্ছায় শহীদ হলেন মহররম মাসে, সেই মহররম মাসে আমরা কিভাবে আনন্দ প্রকাশ করতে পারি? এতে আমরা বিবেকের মাথা খেয়ে ফেলছি না তো। আমরা কার সূক্ষ্ণ চালে এমন অকৃতজ্ঞ মুসলিম জাতি হলাম। একবারও কি কখনো ভেবে দেখেছেন? ১০ই মহররম মাওলা ইমাম হোসাইনের মাথা মোবারক কে*টে বর্শার আগায় বিদ্ধ করে এজিদি সৈন্যরা শহরের অলি গলিতে বিজয় মিছিল করেছিলো। আহ সেদিন কি ছিল তাদের আনন্দ এবং মাওলা ইমাম হোসাইনের মাথা মোবারক সামনে রেখে দুই রাকাত শুকরানা নামাজ আদায় করেছিলো। সেই এজিদের প্রেতাত্না গুলো যুগে যুগে ১৪০০ বছর ধরে মহররম মাসে আনন্দ এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করে। কারণ তাদের পূর্ব পুরুষদের রীতিনীতি প্রথা তারা ভুলতে পারেনি। তাই আজও আমরা সমাজের অলি গলিতে একই রকম দৃশ্য দেখি। আর অন্যদিকে মাওলা ইমাম হোসাইনের প্রেমিকগণ কান্নাজড়িত কন্ঠে হায় হোসাইন, হায় হোসাইন, হায় হোসাইন বলে বিলাপ করে। আমাদের হৃদয়টা অগ্নিশিখার মতো জ্বলে এবং আর্তনাত করি দুই চোখের জল ফেলে। আমাদের নিকট আনন্দ নয় বরং ব্যদনাদায়ক একটি মাসের নাম মহররম। আমরা মাওলা ইমাম হোসাইনের শোক আজও ভুলতে পারিনি এবং কেয়ামত পর্যন্ত ভুলতে পারবো না। তাই শোক কখনো আনন্দ হতে পারে না। কারণ দুটি বিপরীত ধর্মী দুই মেরুর বাসিন্দা। তাই মহররম মাসে সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত হয়ে যায় কারা মাওলা ইমাম হোসাইনের অনুসারী এবং কারা কাফের এজিদের অনুসারী। তাই এদের আকিদা এবং চরিত্রের সাথে আমাদের কেয়ামত পর্যন্ত মিলতে পারে না।
ঈদের দিন কারোর সন্তান অথবা মা ও বাবা মারা যায়। ঈদ তো আনন্দের দিন। কিন্তু ঐ পরিবারের নিকট কি সেদিন আনন্দ হতে পারে? ঈদের দিন কারোর সন্তান মারা গেলে, তার মা ঐদিন সমস্ত আনন্দ বিসর্জন দিয়ে ঐ সন্তানের ব্যবহত জামা বুকে নিয়ে অঝোর নয়নে বিলাপ করে কান্নাকাটি করে। কেউ তাকে সান্ত্বনা দিয়ে কান্না থামাইতে পারে না। অথচ সবাই সেদিন মহা ধুমধামের সাথে ঈদ পালন করে থাকে। কিন্তু ঐ সন্তানহারা দুঃখী মায়ের জন্য সেদিন ঈদ নয়। বরং তার নিকট ঐদিন দুর্বিশয় বিভীষিকাময় দিন। এমন চাক্ষুষ প্রমাণ আমরা অহরহ দেখে অভ্যস্ত। সন্তানহারা দুঃখী মায়ের জন্য যদি ঈদের দিন বিভীষিকাময় দিন হতে পারে, তাহলে মহররম মাস কেনো মুসলিম জাতির জন্য শোকের মাস হবে না? তাহলে কি আমাদের রক্তের মাঝে কোন সমস্যা আছে নাকি? অবশ্যই মুসলিম জাতিকে ডাক্তারের কাছ থেকে ডিএনএ পরীক্ষা করা উচিত।আমি অধম পাগলা লজ্জিত এমন মুসলিম জাতি পরিচয় দিতে।নিজের প্রতি প্রচন্ড ঘৃণা জন্ম নেয়।এমন সেলুকাস মুসলিম জাতি হওয়ার চেয়ে মৃত্যু আমার জন্য অতি উত্তম।অন্তত কলংকের পাহাড়সম বুঝা মাথায় বহন করতে হবে না।ধিক্কার জানাই এমন নির্লজ্জ বেহায়া মুসলিম জাতিকে।যারা মহরম মাসে শুভেচ্ছা ও আনন্দ বিনিময় করে। কবে আমাদের শুদ্ধ বিবেক জাগ্রত হবে তা অধম পাপীর জানা নেই? শুধু মনে করি আমরা বিবেকহীন এবং অকৃতজ্ঞ মুসলিম জাতি। যারা মহররম মাসের গভীর ষড়যন্ত্রগুলো অন্ধের মতো মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে।এরা হীতাহীত জ্ঞান হারিয়ে ঈমাণ বিধ্বসী হুলি খেলায় মেতে উঠেছে।এখনো সময় আছে এজিদি মুসলিমদেরকে চিহ্নিত করে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখার জন্য।নচেৎ তারা আমাদেরকে ঈমান নষ্ট করে চির জাহান্নামী করে দিবে।আল্লাহ তুমি সবাইকে বুঝার জন্য তৌফিক ভিক্ষা দান কর।
হে মাওলা ইমাম হোসাইন আমরা তোমার মহান আত্নত্যাগের কথা ভুলিনি এবং শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত ভুলবো না।তোমার কদমে অধমের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছি, দয়া করে কবুল করে নাও।তোমারই রাঙা চরণে মাথা নবনত চিরকাল।প্রতিটি দিন এবং প্রতি মূহুর্ত আমাদের জন্য কারবালার মাঠ।চোখ মেললেই দেখতে পাই সেই এজিদের প্রেতাত্নাগুলো।জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে গেয়ে যাবো তোমারই গুণগান। তুমি অধম পাগলার অস্তিত্বে মিশে আছো সদাই।পৃথিবীর সমস্ত মানুষ একদিকে চলে গেলেও আমি পাগলা তোমারই গোলাম হয়ে মোহাম্মদী ইসলামের নিশান নিয়ে এগিয়ে যাবো দুর্বার গতিতে।অধমের পথ রুদ্ধ করবে এমন শক্তির জন্ম হয়নি।মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে শিখেছি,ভয় পাওয়ার কিছু নাই।তোমার প্রেমে মৃত্যুই অধম পাগলার একমাত্র চাওয়া পাওয়া।হায় হোসাইন,হায় হোসাইন,হায় হোসাইন,হায় হোসাইন,হায় হোসাইন।