কিশোরগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের নানামুখী হয়রানি আর জনভোগান্তি লাগবে সহজে পাসপোর্ট করতে আবেদনকারীরা দালাল ধরতে বাধ্য হচ্ছেন।কারণ অনলাইনে সরাসরি আবেদন করলে নানা রকম অফিসিয়াল হয়রানী আর ভোগান্তি পোহাতে হয় সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের।আবেদনপত্রে নানা ভুল ধরে তা সংশোধন করে আনতে বলা হয় অফিস ডেক্স থেকে বারবার।তখনেই সুযোগ নেয় দালালরা।গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত কয়েক হাজার টাকা নিয়ে একই আবেদনপত্র বিশেষ সিল দিয়ে অফিসে জমা দেয় তারা। তখন আর কোন সমস্যা হয়না।এখানেও রয়েছে অফিস কর্তৃক গ্রীন সিগ্ন্যাল।অর্থাৎ দালালের মাধ্যমে জমা দেওয়া পাসপোর্টের আবেদন গুলোতে দেওয়া থাকে ‘বিশেষ চিহ্ন তথা চ্যানেল সীল মোহর’।যদিও গত দুই সপ্তাহ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত সাংকেতিক স্বাক্ষর করে জমা নিচ্ছে পাসপোর্ট অফিস।কারণ হিসেবে চ্যানেল ফাইলের সীলস্বাক্ষর ইতিমধ্যে দূদকের অভিযানে প্রমান মিলেছে বলে একটি সুত্র নিশ্চিত করেছে।অপরদিকে গণমাধ্যম কর্মীদের হাতে পৌঁছে গেছে সীলমোহরকৃত চ্যানেল ফাইল বলে জানা যায়।সর্বোপরি স্মার্টলি দালালী তথা চ্যানেলে জমা দিলে ওই আবেদন কারীরা দ্রুত ফিঙ্গার প্রিন্ট,ছবি তোলা ও পাসপোর্ট পান।এ জন্য দালালদের অতিরিক্ত কয়েক হাজার টাকা দিতে হয় পাসপোর্ট করতে আসা সেবা গ্রহীতাকে।কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সেবার মান ও নামে চলছে সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র।পাসপোর্ট অফিসে সেবার মান না বাড়লেও-বেড়েছে ঘুষ বাণিজ্য!!
দালাল ছাড়া আবেদন করলে নানা হয়রানির শিকার হন আবেদন কারীরা।পাসপোর্টও মেলে না যথা সময়ে।বাধ্য হয়ে জেলার ১৩ উপজেলার সরল সহজ গ্রামগঞ্জের মানুষ অবৈধ দালালদের খপ্পরে পরে অতিরিক্ত অর্থ খোয়াচ্ছে।সরজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, পাসপোর্ট অফিসের সকল কর্মকাণ্ড যিনি নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনা করেন তিনি হলেন পাসপোর্ট অফিসের সহকারী হিসাব রক্ষক আশরাফ আলী।অভিযোগ রয়েছে এই আশরাফ আলীই অত্র অফিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে চ্যানেল ফাইল বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।ফলে চ্যানেল ফাইল বাণিজ্যিক দালালদের এমন দৌরাত্ম্য চলছে বছরের পর বছর।আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দূদক কয়েকবার অভিযান এবং মাঝে মধ্যে দু-একজনকে গ্রেপ্তার করলেও অত্র অফিসের কোন দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নজির দেখেনি সাধারণ মানুষ।ফলে এই লোক দেখানো অভিযান কিংবা গ্রেফতারের পরদিন থেকে আগের চেয়েও বেশি করে চলে এসব অবৈধ ঘুষ বাণিজ্য।
সম্প্রতি পাসপোর্ট করতে আসা কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের বলেন,সহকারী পরিচালক আইরিন পারভীন ডালিয়া’র পত্যক্ষ মদদে আশরাফ ও তার সহকর্মী হাবিবকে নিয়ে নিত্য নতুন কৌশলে চ্যানেল বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে দেদারসে।যেভাবেই আবেদন জমা পড়ুক,অফিসকে প্রতিটি আবেদনে এগারোশত টাকা দিতেই হয়।অথচ নিয়ম হলো ব্যাংকে ফি জমা দিয়ে রসিদ আবেদনের সঙ্গে যুক্ত করে অফিসে জমা হলে ডিএডি স্ক্যান করে।এরপর স্ক্যান করা আবেদনপত্র নিয়ে আবেদনকারী ছবি তোলা হবে।ফিংগার নেয়া হবে।পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর নির্দিষ্ট সময়ে পাসপোর্ট দেওয়া হবে।তথ্যানুসন্ধান আরও জানা যায়,চ্যানেল ফাইল প্রতি ১১ শত টাকা সপ্তাহান্তে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সবার কাছ থেকে একসাথে উত্তোলন করে অফিসে বিলি বন্টন করা হয়। এই চ্যালেন বাণিজ্যের ঘুষের টাকা উত্তোলনের জন্য কিছুদিন পূর্বে পাসপোর্ট অফিসে বরকত উল্লাহ নামে একজনকে নিয়োগ দিয়েছিল আশরাফ আলী।সে প্রতি সপ্তাহের বুধবার অথবা বৃহস্পতিবার চ্যানেল বাণিজ্যের ঘুষের টাকা চ্যানেল ফাইল জমাকারী দোকানদারদের কাছ থেকে উত্তোলন করে অফিসের হিসাব রক্ষক মোঃ আশরাফ আলীর নিকট জমা দিত।সুযোগ বুঝে নিয়োগ প্রাপ্ত বরকত উল্লাও চ্যানেল বাণিজ্যের ১৪ লাখ টাকা নিয়ে গাঁ ঢাকা দেয়।ঘুষের টাকা নিয়ে ঘা ঢাকার কারণে বিষয়টি নিয়ে ততোটা পানি ঘোলা করেনি পাসপোর্ট অফিসের হিসাব রক্ষক আশরাফ আলী।জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে তিনশত পাসপোর্ট আবেদন জমা হলে দৈনিক তিন থেকে চার লাখ টাকা ঘুষ বাণিজ্য হয়।প্রতি সপ্তাহে ১৫থেকে ১৮ লাখ টাকা ঘুষ বাণিজ্য হয়।সরজমিন অনুসন্ধান আরও জানা যায়,পাসপোর্ট অফিসের ভিতর ও বাহিরে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনায় আশরাফের ভয়ন্কর ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনার বহিঃপ্রকার।বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আরও ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের তথ্য।অভিযোগ রয়েছে পাসপোর্ট অফিসের চ্যানেল বাণিজ্যের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে অফিসের সহকারী হিসাব রক্ষক মোঃ আশরাফ আলী এই সংশ্লিষ্ট এলাকার কিছু ছেলেদের বিভিন্ন ভাবে লালন পালন করছেন।বিভিন্ন জন এমনকি পাসপোর্ট অফিসের ডিএডির বিরুদ্ধে তার লালিত এই বাহিনী দিয়ে হামলারও স্পর্শকাতর অভিযোগও অনুসন্ধানে উঠে আসে।অপরদিকে তাদের রিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের হুমকি দিয়ে স্থানীয় ছেলেদেরকে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়ার ভয়ংকর খেলারও সংবাদকর্মীদের কাছে এ তথ্য চলে আসে।এই আশরাফ এর হাত থেকে এখন পাসপোর্ট করতে আসা সাধারণ জনগন থেকে শুরু করে সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি কেউই রেহাই পাচ্ছে না।একটার পর একটা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে কখন কাকে কিভাবে ফাসায়।ফলে এখন একচেটিয়া আশরাফ নিয়ন্ত্রণে পাসপোর্ট অফিস। এখানে আশরাফ ছাড়া কারও কর্তৃত্ব চলেনা।তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, আশরাফ আলী নিজের ঘুষ বাণিজ্য নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাওয়ায় অভিলাষে স্থানীয় ছেলেদের কিশোর গ্যাং অপবাদ দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করতে গণমাধ্যম কর্মীদের অতি সুকৌশলে মিথ্যা তথ্য দেয়।সেই তথ্যের সুত্রে দৈনিক মুক্ত খবর পত্রিকায় মাদকাসক্ত ও কিশোর গ্যাংদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হয়।তার পেক্ষিতে সাংবাদিকের উপর হামলা করে।আশরাফ স্থানীয় ছেলেরা এবং সংবাদ কর্মীরা মুখোমুখি অবস্থানে মারমুখী হয়ে যায় এবং মুক্ত খবরের প্রতিনিধি তাদের হাতে শারীরিক লাঞ্ছিত হয়েছেন।বিষটি নিয়ে কিশোরগঞ্জ সদর থানায় মামলাও হয়েছে।এছাড়াও জানা যায়, ডিএডি আব্দুল আজিজকে জিম্মি রেখে আশরাফ নিজেই নাকি ডিএডি কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।এ ব্যাপারে ডিএডি আব্দুল আজিজ গণমাধ্যমকে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করে।সবমিলিয়ে আশরাফ আলীর মিশন এবং ভিশন পুরোটাই সাকসেস বলেও প্রতীয়মান হচ্ছে।ফলে পাসপোর্ট অফিসে ঘুষের পরিমান বেড়েছে।নিজেদের ঘুষখ্যাত চ্যানেল বাণিজ্য নির্বিগ্নে চলছে।এ বিষয়ে পাসপোর্ট অফিসের নানামুখী হয়রানি আর অনিয়ম দূর্নীতি ঘুষ বাণিজ্য তুলে ধরে রঞ্জন মোদক রনি নামের জনৈক ব্যক্তি ডিজি বরাবর রেজিস্ট্রি ডাকে অভিযোগ প্রেরনের বিষয়টিও জানা যায়।এ বিষয়ে কয়েকটি জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক যথাক্রমে দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশ,দৈনিক মুক্তখবর,দৈনিক আজকের বসুন্ধরা,দৈনিক শতাব্দীর কন্ঠ,কালের নতুন সংবাদ’সহ একাধিক সংবাদপত্রে সচিত্র সংবাদ প্রকাশেও ধরাকে সরাজ্ঞান করে চলেছেন হিসাব রক্ষক আশরাফ আলী।শুধু তাই নয় পাসপোর্ট অফিসের সংবাদ করতে গিয়েও গণমাধ্যম কর্মীদের হুমকি প্রদানেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে এই আশরাফের বিরুদ্ধে।তাই জনমনে কানাঘুষা হিসাব রক্ষক আশরাফের খুটির জোর কোথায়?এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী হিসাব রক্ষক আশরাফ আলীর মোবাইলে একাধিকবার কল দিয়ে মোবাইল রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আইরিন পারভীন ডালিয়া বলেন,কার্যালয়ে দালালের প্রবেশ নিষেধ।তিনি কোথাও দালাল দেখেননি।বাইরে থাকলে কিছুই করার নেই।কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে দালালদের যোগসাজশের লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে ফাইল প্রতি ১১০০ টাকা ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি তিনি অতি সুকৌশলে এরিয়ে যান।আশরাফকে পত্যক্ষ মদদের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন,অফিস নিয়ম তান্ত্রিকভাবেই চলছে।পাসপোর্ট অফিসে দূর্নীতি বিরোধী অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে দূর্নীতি দমন কমিশনের কিশোরগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ সালাহউদ্দীন এ প্রতিনিধিকে বলেন,এটা আমাদের দূর্নীতি বিরোধী নিয়মিত অভিযান।তবে অভিযানের বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে আমাদের নিয়ম অনুযায়ী অবহিত করে থাকি।এছাড়াও ইতিমধ্যে আমাদের অভিযানে সীলমোহরকৃত চ্যানেল ফাইল ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে।তিনি আরও বলেন,জেলার সবচেয়ে বেশি অভিযান পাসপোর্ট অফিসে পরিচালিত হয়েছে।এছাড়াও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সরাসরি ব্যাক্তির কাছ থেকে পাওয়া গেলে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের যথাযথ অনুমোদন সাপেক্ষ অভিযান চালাবো ঘুষ-দূর্নীতি বন্ধে।