কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের ঐতিহ্যবাহী মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়।১৯১৬ সালে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্বপ্রান্তে শোলাকিয়ায় আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন দানবীর মুন্সী আজিম উদ্দিন আহাম্মদ।যুগ যুগ ধরে শিক্ষা প্রাসারে ভূমিকা রাখা শতবর্ষী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এখন আলোচিত আয়া-আর পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ-বাণিজ্য নিয়ে।জেলা শহরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক মোকাররম হোসেন শোকরানা এর বিরুদ্ধে ভূয়া/জাল সার্টিফিকেট ও অভিজ্ঞতার সনদপত্র দেখিয়ে আয়া ও পরিচ্ছন্ন কর্মী পদে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।এনকি প্রাতিষ্ঠানিক নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ‘মনগড়া বিশেষ’ ভাতার নামে অবৈধ টাকা উত্তোলন,শিক্ষক/কর্মচারীদের বেতন ভাতা বন্ধ রেখে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিত দেশত্যাগ করে স্কুলে অনুপস্থিত থাকাসহ প্রাতিষ্ঠানিক আয়-ব্যয়ের অসচ্ছতা অভিযোগ পাওয়া গেছে।জানা গেছে,গত বছরের ১৭ নভেম্বর বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক দৈনিক সমকাল পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিদ্যালয়টিতে ১ জন আয়া ও ১ জন পরিচ্ছন্ন-কর্মী মাধ্যমিক শিক্ষা নীতিমালা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হবে।এ আবেদনে আয়া পদে ৩৫ উর্ধ্ব মোছা. লিপা আক্তার ও পরিচ্ছন্ন-কর্মী পদে ৩৫ উর্ধ্ব মো. খোকনকে ভূয়া/জাল শিক্ষাগত যোগ্যতার অভিজ্ঞানপত্র,নিয়োগ সংক্রান্ত ভূয়া/জাল রেকর্ড প্রদান করে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয় এবং এমপিও ভূক্তির আবেদন আগ্রায়ন করে এমপিও ভূক্ত করে সরকারি কোষাগার থেকে বেতন বাবদ অধৈধভাবে অর্থ উত্তোলন করছে।প্রতিবেদকের হাতে আসা নথি অনুযায়ী,আয়া পদে ৩৫ উর্ধ্ব মোছা. লিপা আক্তার ও পরিচ্ছন্ন-কর্মী পদে ৩৫ উর্ধ্ব মো. খোকন কিশোরগঞ্জ জেলার কমিরগঞ্জ উপজেলার দেহুন্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিসিয়াল প্যাড নকল করে ২টি ভূয়া অভিজ্ঞানপত্র তৈরি করা হয়।এছাড়াও তাদের কোন জাতীয় পরিচয় পত্রও দেয়া হয়নি।প্রতিষ্ঠানটির আয়া মোছা. লিপা আক্তার ও পরিচ্ছন্নকর্মী মো. খোকনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে আয়া লিপা আক্তার সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দিলেও পরিচ্ছন্ন-কর্মী মো. খোকন বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা আমরা গরিব মানুষ! আমাদের চাকুরিচ্যুত করতে চক্রান্ত চলছে।এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোকাররম হোসেন শোকরানা বলেন,যে এ ধরণের অভিযোগ করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এমন কোনো কিছু আমার স্কুলে হয়নি।আমরা যাচাই-বাছাই করেই তাঁদের নিয়োগ দিয়েছি।এ ব্যাপারে দেহুন্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক মো. আবদুস ছালাম বলেন, আমি দু্টি অভিজ্ঞানপত্র যাচাই করে দেখেছি দুটি অভিজ্ঞানপত্রই সম্পূর্ণ ভূয়া ও অগ্রহনযোগ্য। কারণ উক্ত প্রতিষ্ঠানের তৎসময়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মুনসুর আলী বিগত ২০০৩ খ্রি. সালে ইন্তেকাল করেছেন। কাজেই উনি তো কবর থেকে এসে ২০১০ সালের অভিজ্ঞানপত্রে স্বাক্ষর করেনি।এ গুলো ভূয়া সঠিক নয়।এছাড়া উনার স্বক্ষরিত বিভিন্ন কাগজপত্রাদিতে দেওয়া স্বাক্ষর যাচাইয়ান্তে দেখা যায় যে,অভিজ্ঞানপত্রে দেওয়া স্বাক্ষরের সাথে মোাহাম্মদ মনসুর আলী স্যারের স্বাক্ষর কোনো ভাবেই মিল নেই। কাজেই সার্বিক বিবেচনায় অভিজ্ঞানপত্র দুটি ভূয়া এবং বাতিল যোগ্য।এছাড়াও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলের অর্ধকোটি টাকা নয়চয়সহ বিভিন্ন ভাতার উত্তোলনের নামে বিভিন্ন গুরুত্বর অভিযোগ গণমাধ্যম কর্মীদের হাতে এসেছে।অভিযোগ এসেছে তিনি ম্যানেজিং কমিটি এমনকি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসসহ নিজ প্রতিষ্ঠানেরও কোন শিক্ষককে না জানিয়ে অতি গোপনে পবিত্র হজ্বের মত বিষয়টি সিক্রেটলী করে এসেছেন। প্রশ্ন এখানেও লুকোচুরি করে তিনি কি ম্যাসেজ দিতে চেয়েছেন প্রশ্ন সকলের।আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এডভোকেট মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন,নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়টি আমি সার্বিক ভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি এ নিয়োগ দুটোই আইন সংগত হয়নি।ভূয়া,জাল,জালিয়াতির মাধ্যমে হয়েছে।এছাড়া উনি বিশেষ ভাতার নামে প্রতি মাসেই বিশেষ ভাতা উত্তোলন করে স্কুলের অর্থ আত্মসাৎ করছেন।এ বিষয়ে আমি উনাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি এবং শিক্ষা অধিদপ্তর,জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে অনুলিপি প্রদান করেছি।উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রোকন উদ্দিন বলেন,আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে আয়া এবং পরিচ্ছন্ন-কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটির পক্ষ থেকে আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি।উল্লেখ্য,আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ময়মনসিংহ অঞ্চল পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান ও কিশোরগঞ্জ জেলা পর্যায়ে ২০১৮,২০২৩ ও ২০২৪ সালে ৩য় বার টানা দুইবার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন।