সুমন ভট্টাচার্য ময়মনসিংহ
সেবা,সততা,নিষ্ঠা আর আন্তরিকতার মাধ্যমে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ,মাদক নির্মূল,অস্ত্র উদ্ধার,সুস্থ ও নিরেপক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন মোকাবেলা,চাঞ্চল্যকর মামলার রহস্য উদঘাটনের মধ্য দিয়ে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ মো: মাছুম আহাম্মদ ভূঞা পিপিএম সফলতার সাথে এক বছর পার করেছেন।জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা,সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধান,ও অসহায়দের সহযোগিতায় অক্লান্ত পরিশ্রম করেন তিনি।চিত্ত যেথা শস্কাহীন,লক্ষ্য যেথা স্থির,বর্ষপূর্তির শুভক্ষনে,সালাম হে কর্মবীর গত ২৭ আগস্ট ২০২২ সালে মাছুম আহাম্মদ ভূঞা পিপিএম জয়পুরহাট জেলা থেকে ময়মনসিংহ জেলার ১১৯তম পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন।২৭ আগস্ট ২০২৩ দায়িত্ব গ্রহনের এক বছর পূর্ণ হল।এই ১ বছরেই জয় করেছেন ময়মনসিংহের মানুষের মন।এই এক বছরে তিনি পুলিশ সম্পর্কে ময়মনসিংহবাসীর ধারণাই পাল্টে দিয়েছেন।নিরলস পরিশ্রমী,মেধাবী এই কর্মকর্তার কারণে ময়মনসিংহের সাধারণ মানুষ আজ পুলিশকে তাদের রক্ষাকবচ ও বন্ধু ভাবতে শুরু করেছে।তিনি সাধারণ মানুষকে বার্তা দিতে পেরেছেন,পুলিশ কোন আতঙ্ক নয়,জনসাধারণের রক্ষাকবচ হিসেবে পুলিশ তাদের পাশে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।যে কোন প্রয়োজনে তারা যেন পুলিশের সাহায্য নেয়।দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন এই নীতির কারণে তিনি আজ জেলার মানুষের কাছে আস্থার প্রতীক।পুলিশ সুপার হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে জেলার সামগ্রিক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন ও বিচার বিভাগসহ সকল সরকারি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান সমূহের সাথে জেলা পুলিশের সুষ্ঠু সমন্বয় নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে গেছেন যার ফলশ্রুতিতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ,প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ সর্বোপরি সাধারণ জনগনের মাঝে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে।আর এই ভাবমূর্তিকে সমুন্নত রাখার প্রয়াসে বিগত এক বছরে পুলিশ সুপারের কার্যকরী দিকনির্দেশনা ও আভিযানিক সক্ষমতার ফলশ্রুতিতে জেলার অপরাধ নিবারণ ও নিয়ন্ত্রণ অনেকাংশেই সম্ভবপর হয়েছে।শুধুমাত্র বিগত এক বছরের মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত অপরাধ পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠবে। গত সেপ্টেম্বর ২০২২ হতে ২০ আগস্ট ২০২২ পর্যন্ত মোট ১,৪৭২ টি মাদক মামলায় ২,১৮৩ জন মাদক ব্যবসায়ী, অর্থলগ্নিকারী ও তালিকাভুক্ত মাদক কারবারীকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে।বিভিন্ন সময় এদের কাছ থেকে মোট ৪.১২২ কেজি হেরোইন,৬৮,৯৯২ পিছ ইয়াবা,৪৩৬.১৬৭ কেজি গাঁজা,৩৩২ বোতল ফেন্সিডিল,১,৬৯৬ টি নেশাজাতীয় ইঞ্জেকশন,১,৩৭৭ লিটার দেশী মদ,১,১১৬ বোতল বিদেশী মদ এবং ৪,৮৬২ পিছ টাপেন্টাডল ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয় যার সর্বমোট আনুমানিক মূল্য প্রায় ৭,০৯,৭৭,৬৬৫/-(সাত কোটি নয় লক্ষ সাতাত্তর হাজার ছয়শ পঁয়ষট্টি)টাকা।পাশাপাশি,গত ২৭/৮/২০২২ হতে ২৫/৮/২০২৩ তারিখ পর্যন্ত এক বছরে বিভিন্ন নিয়মিত মামলায় মোট ৪,১৭৪ জন আসামী গ্রেফতার কর সম্ভব হয়েছে যার মধ্যে ডাকাতি মামলায় ২৯ জন,খুন মামলায় ২১৮ জন,চুরি মামলায় ৮৭৩ জন,অস্ত্র মামলায় ৩৭ জন,চোরাচালান মামলায় ১৬ জন,এবং বিভিন্ন পরোয়ানামূলে মোট ৬,২৩৪জন।এছাড়াও,অনলাইন জিডি চালু হওয়ার পর থেকে অদ্যবধি মোট ২৮,৭৬২ জনি সেবাপ্রার্থী জেল পুলিশের স্বচ্ছ ও সময়োপযোগী সেবা গ্রহন করেছেন যা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা পিপিএম সাফল্যের স্মারক হয়ে জনমনে স্থান করে নিয়েছে।এরপর একে একে বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ তিনি গ্রহণ করেছেন,যেমন-দীর্ঘদিন যাবৎ যানজট সমস্যায় পর্যুদস্ত ময়মনসিংহের পাঠগুদাম বাসস্ট্যান্ডকে যানজটমুক্ত করতে তিনি প্রথম থেকেই সকল পর্যায়ের পরিবহন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সক্রিয় সমন্বয়ের মাধ্যমে শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে এগিয়ে আসেন।এই বাস্তবতায় তিনি প্রথমেই পাটগুদাম মোড় ও টার্মিনাল এলাকায় জেলা প্রশাসনের সাথে অভূতপূর্ব সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রায় ৩০০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে সক্ষম হন।শহরের উপকন্ঠে ও অভ্যন্তরে ট্রাফিক ব্যবস্থা জনবান্ধব করে তোলার স্বার্থে তিনি সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতায় শম্ভুগঞ্জ,পাটগুদাম,দিঘারকান্দা বাইপাস,ফুলবাড়িয়া বাইপাস,চরপাড়া,মাসকান্দা ও নতুন বাজার-গাঙিনার পাড়সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোড়গুলো যানজটমুক্ত রাখার জন্য ইজিবাইক চলাচলে’জোড়-বিজোড়’পদ্ধতির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিৎ করেছেন।
ইতোমধ্যে সম্মানিত পুলিশ সুপার মহোদয়ের সুষ্ঠু সমন্বয়ের ফলস্বরূপ ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ডে জমে থাকা যানজটের দুর্দশা আজ ইতিহাস।সম্ভাব্য সর্বোচ্চ দ্রুততায় সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ডের সংস্কার কাজ শেষ হলে শহরে চলাচলকারী সকল বাস সেখানে স্থানান্তরিত করা সম্ভব হবে যা জেলার স্মরণকালের ইতিহাসে ট্রাফিক বিভাগের জন্য এক বৈপ্লবিক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে বলে আশা করা যায়।অগণিত মানুষের ঈদযাত্রাকে নিরাপদ ও সাবলীল করার লক্ষ্যে তিনি ভালুকা সীডস্টোর বাজার হতে একদিকে শম্ভুগঞ্জ থেকে শুরু করে অন্যদিকে মুক্তাগাছা থানার শেষ সীমানা পর্যন্ত ব্যাপকভিত্তিক সুবিন্যস্ত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন তাঁরই নেতৃত্বে সম্পন্ন হয়েছে।ত্রিশাল থানাধীন চেলেরঘাট ব্রিজে দুর্ঘটনা কিংবা শহরব্যাপী বিবিধ উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজকে ছাপিয়ে ময়মনসিংহ ট্রাফিক বিভাগ আজ নতুন সম্ভাবনার দ্বারে।এতসব কাজের ভীড়েও জনাব মাছুম আহাম্মদ ভূঞা,পিপিএম মহোদয় বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী শহীদ পুলিশ সদস্যবৃন্দ এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহের মুক্তিযুদ্ধ ও ঐতিহ্যকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে চিরস্মরণীয় করে রাখতে জেলা পুলিশ লাইন্সের অভ্যন্তরে স্বয়ং এক ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে থাকা বৃটিশ আমলের পুরানো পুলিশ হাসপাতাল ভবনে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর,ময়মনসিংহ স্থাপনের এক গবেষণাধর্মী ও মহৎ উদ্যোগ নিয়েছেন যা প্রকারান্তরে তাঁর দেশপ্রেম ও সৃজনশীলতার বহি:প্রকাশ।জেলা পুলিশের প্রতিটি সদস্য পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা,পিপিএম এর নেতৃত্বে কাজ করার সুযোগ পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।