কিশোরগঞ্জ(নীলফামারী)প্রতিনিধিঃ
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভিশন হচ্ছে‘সকলের জন্য নিরাপদ,পর্যাপ্ত ও মানসম্মত প্রাণিজ আমিষ নিশ্চিতকরণ।এই ভিশন বাস্তবায়নের লক্ষে নিরাপদ আমিষের চাহিদা পূরনে গবাদিপশু,হাঁস মুরগী,দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধিসহ সংরক্ষন,রোগনিয়ন্ত্রন ও জাত উন্নয়নে মৎস্য ও প্রানিসম্পদ মন্ত্রনালয় ও অধিদপ্তর অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা প্রানিসম্পদ বিভাগের অবহেলার কারণে সেই উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে।বর্তমানে সারা দেশের ন্যায় কিশোরগঞ্জ উপজেলায় গবাদীপশুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে রোগটি নিয়ন্ত্রনে প্রানিসম্পদ দপ্তরের জোড়ালো কোন পদক্ষেপ না থাকায় প্রতিদিন গরু মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে।গত দুইমাসে রোগটিতে আক্লান্ত হয়ে ৫ শতাধিক এর বেশি গরু মারা গেছে বলে জানিয়েছেন গরুর মালিক ও খামারিরা।খামারিরা জানিয়েছেন মারা যাওয়া একেকটি গরুর মূল্য ৩০ হাজার থেকে দেড়লাখ টাকা পর্যন্ত।ফলে গরুর মালিক ও খামারিরা পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।উপজেলা প্রানিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে,উপজেলা প্রানিসম্পদ দপ্তরে মোট ৯ জন কর্মচারী রয়েছেন এর মধ্যে উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকতার্,ভেটেরেনারী সার্জন,তিনজন উপ সহকারী প্রাণীসম্পদ কর্মকতার্
,ভিএফএ তিনজন ও একজন অফিস সহকারী, প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের নিয়ম থাকলেও তিনি দায়িত্ব পালন না করে গত উপজেলা মাসিক মিটিংয়ে ভেটেরেনারী সার্জনকে মিটিংয়ে পাঠিয়েছেন। ডাক্তার না থাকায় অসুস্থ গরু নিয়ে গরুর মালিকরা হাসপাতালে এসে চিকিৎসা না পেয়ে গরু নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। আবার কেউ কেউ ফামার্সি থেকে ওষুধ নিয়ে বাড়ি গেছেন। এদিকে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর থাকলে তাঁকে বসিয়ে রেখে ভিএফএ তাজনুর বেগমকে দিয়ে অফিস সহকারীর দায়িত্ব পালন করায় প্রাণিসম্পদ কর্মকবর্তা।প্রানিসম্পদ কর্মকর্তার জায়গায় আপনি মাসিক মিটিংয়ে কেন প্রশ্ন করলে ভেটেরেনারী সার্জন নাহিদ সুলতান বলেন,প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা আমাকে পাঠিয়েছে তাই আমি গিয়েছি।এদিকে গবাদীপশুর উন্নয়নে এ উপজেলায় সরকারীভাবে এলডিডিপি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ১১ জন,জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেটেরেনারী পাবলিক হেলথ সার্ভিস জোরদার করন প্রকল্পে ১ জন এবং প্রানিপুষ্টির উন্নয়নে উন্নত জাতের ঘাস চাষ সম্প্রসারণ ও লাগসই প্রযুক্তিহস্তান্তর প্রকল্পে ১ জন কর্মচারী নিয়োগ থাকলেও তাঁরা কোন কাজ না করে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে দিনের পর দিন সরকারী বেতন উত্তোলন করছেন।গবাদীপশুর উন্নয়নে কি কি সরকারী প্রকল্প চালু রয়েছে,এলডিডিপি প্রকল্পের আওতায় করোনাকালিন সহায়তা প্রাপ্ত খামারীদের তালিকাসহ অন্যান্য তথ্য চাইলে প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা নুরুল আজিজ তথ্য আইনে আবেদন করতে বলেন।সে অনুযায়ী গত ৩/৫/২০২৩ ইং তারিখে আবেদন করলে তিনি কোন তথ্য সরবরাহ করেননি।গত সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে খামারী ও গরুর মালিকদের কাছ থেকে জানা গেছে,লাম্পি স্কিন ডিজিজ ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে এ রোগে হাজার হাজার গরু আক্লান্ত হয়েছে। এই রোগে আক্লান্ত হয়ে গাড়াগ্রাম ইউনিয়নে উদ্যোক্তা পাইলট মিয়ার ৭০ হাজার টাকা দামের একটি গরু,জিয়ারুলের ১ টি,রতনের ১টি,হামিদুল মিয়া ১টি,এরশাদুল মিয়ার ১টি গরু মারা গেছে। গাড়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা পাইলট মিয়া জানান,শুধু আমার ইউনিয়নে গত একমাসে আমার জানামতে ৩০ টি গরু মারা গেছে।পুটিমারী ইউনিয়নের কালিকাপুর বালাপাড়া গ্রামের সামাদুলের ১টি,জহুরুলের ১টি,ব্যাংগের ১টি,বলটুর ১টি,পেয়ারুলের ১টি,আতাউরের ১টি,মিজানুরের ১টি।পুটিমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সায়েম লিটন জানান,আমার ইউনিয়নে রোগটি ব্যাপক আকার ধারন করেছে।আমার জানা মতে গত ২০ দিনে ২৫ টি গরু মারা গেছে।এছাড়াও রোগটিতে আক্লান্ত হয়ে গত ১০ দিনে নিতাই ইউনিয়নের কোরানীপাড়া গ্রামে ৭টি,বড়ভিটা ইউনিয়নের মেলাবর গ্রামে ২টি,বাহাগিলি ইউনিয়নের উত্তর দুরাকুটি গ্রামে ৮ টি গরুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।বাহাগিলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুজাউদ্দোলা লিপটন বলেন,আমার ইউনিয়নে এই রোগে আক্লান্ত হয়ে ২২ টি গরুর মৃত্যুর তথ্য আমি পেয়েছি।এর বাইরে আরো থাকতে পারে ভয়াবহ এইরোগে লক্ষ লক্ষ টাকার গরু হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছে গরুর মালিক।তিনি আরো বলেন অনেকের কাছ থেকে শুনতে পাচ্ছি গোটা উপজেলায় শত শত গরুর মৃত্যু হয়েছে।উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকতার্ নুরুল আজীজের কাছে লাম্পি স্কিল ডিজিজ রোগে গরুর মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি গরু মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করে বলেন,দেখেন কোথায় গরু মরছে এগুলো দেখে জানাতে হবে।অফিস সহকারীকে বসিয়ে রেখে ভিএফ কে দিয়ে অফিসের কাজ করাচ্ছেন।এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, অফিসের প্রয়োজনে যে কাউকে যে কোন কাজে লাগাতে পারি। প্রশাসনিক কাজে আপনি না গিয়ে ভেটেরেনারী সার্জনকে পাঠিয়েছেন এত করে গবাদীপশুর চিকিসা ব্যাহত হচ্ছে,জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি অসুস্থ ছিলাম তাই ওনাকে পাঠিয়েছিলাম।