মোশারফ হোসেন রংপুর ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি
রংপুর জেলা কালেক্টরেট স্কুল এ্যান্ড কলেজ, প্রতিষ্ঠিত ১৯৮৯ সালে। সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসাহাক হোসেনের হাত ধরে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তখনকার সময়ে উক্ত প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, ২০১২ সালে অবসরে যাওয়ার পর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে নানাবিধ অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির দায়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি ঐতিহ্যবাহী রংপুর জেলার এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে উক্ত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, ক্ষমতার অপব্যবহার, সচিব স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে ডাক বাংলোর কক্ষ বছরের পর বছর নিয়ন্ত্রণ, করা প্রশ্নপত্র ফাঁস, নকল সাপ্লাই, ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণসহ প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎসহ অসংখ্য অভিযোগ থাকা স্বত্বেও বহাল তবিয়তে আছেন অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা পারভীন। ইতিপূর্বে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা-কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সহকারী কৃষি শিক্ষক আলতাফ হোসেনকে ১১ বছর এবং ব্যবস্থাপনা প্রভাষক, এলাহী ফারুক-কে ৬ বছর যাবৎ সাময়িক বরখাস্ত করে রাখেন, অদৃশ্য ক্ষমতার অধিকারী অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা পারভীন। ব্যবস্থাপনা প্রভাষক এলাহী ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, কালেক্টরেট স্কুল এ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই সুনামের সাথে আমি আমার দায়িত্ব পালন করে আসছিলাম, ইতিপূর্বে আমাকে রিওয়ার্ড স্বরূপ কলেজ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন দেশে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য সুযোগ পর্যন্ত করে দিয়েছে। আমি এই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ সতের বছর সার্ভিস তথা শিক্ষকতা করে আসছিলাম, হঠাৎ করেই অধ্যক্ষের নীতিবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা না করার দায়ে তিনি ক্ষোভের বসবর্তী হয়ে ভিত্তিহীন এক অভিযোগের উপর আন্দাজ করে আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। সেই সাময়িক বরখাস্ত’র জের ধরে অধ্যক্ষের সচিব স্বামী থাকা অবস্থায় অনৈতিক তদবিরের মাধ্যমে আমার এমপিও বাতিল করেন। আজ সাত বছর যাবৎ আমি পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। বারংবার জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করেও কোন সুরাহা পাইনি, ইতিপূর্বে একজন জেলা প্রশাসক আমাকে ডেকে, অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা পারভীন এর সচিব স্বামী আবুল কালাম আজাদ এর নগ্ন হস্তক্ষেপের কথা স্বীকার করেছেন এবং তিনি বলেন আমাদের ইচ্ছে থাকলেও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছি না। প্রভাষক এলাহী ফারুক আরও বলেন, নিরপেক্ষ তদন্ত করা হলে বর্তমান অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা পারভীন শতভাগ অবৈধ বলে বিবেচিত হবেন এবং সঠিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার মান আরও উন্নত হবে।
রংপুর জেলা কালেক্টরেট স্কুল এ্যান্ড কলেজ কর্মরত প্রফেসর আব্দুর রউফ মন্ডল বলেন, বিগত সময়ে প্রতিষ্ঠান প্রধান মঞ্জুয়ারা পারভীনের অনিয়ম দুর্নীতি ও পরীক্ষা ছাড়াই নিয়োগের বিষয়ে রংপুর জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছিলাম। পরে সেই অভিযোগ ডিসি অফিসের নথি থেকে গায়েব হয়ে যায়! আমি অভিযোগ দিয়েছি জেলা প্রশাসকের নিকট অথচ সেই অভিযোগ তুলে এনে আমার বাড়িতে এসে হুমকি দিয়ে যায় অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা পারভীনের অনিয়ম দুর্নীতির সহচর কালেক্টরেট স্কুল এ্যান্ড কলেজের প্রাইমারি শাখার অংকনের শিক্ষক ডাব্লু ও তার স্ত্রী। তারা আমাকে বলেন, এসব বাদ দিতে, তা না হলে পরিণতি ভালো হবে না। তবে জেলা প্রশাসকের নিকট দায়েরকৃত অভিযোগের রিসিভ কপি আছে, আমি আবারও সেই অভিযোগটি দিবো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, কালেক্টরেট স্কুল এ্যান্ড কলেজ, রংপুর-এ অনিয়ম দুর্নীতি এখন নীতি আদর্শে পরিণত হয়েছে, স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে বারংবার সংবাদ প্রকাশের পরেও টনক নড়েনি দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা পারভীন ও তার সহযোগীদের। তারা আরও বলেন, এতো অনিয়ম করেও বার বার পার পেয়ে যায়, কারণ তার স্বামী সাবেক সচিব হওয়ায় ইচ্ছে থাকলেও জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসন কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করতে পারছেন না। তাইতো একের পর এক বিতর্কিত ঘটনা ঘটেই চলছে প্রতিষ্ঠানটিতে, তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ২৩ পরিবার পরিকল্পনা FWV- (Family Welfare Visitor) পদে সারা দেশের ন্যায় কালেক্টরেট স্কুল এ্যান্ড কলেজ রংপুর এ অনুষ্ঠিত হয় নিয়োগ পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় নিয়মবহির্ভূতভাবে সংগঠিত হবার কারণে, চতুর্থ তলা ৫০১নং রুম থেকে অতিরিক্ত ৭৪টি ওএমআর সীট উদ্ধার করা হলেও কোন প্রভাব পড়েনি দুষ্কর্ম্মে জড়িতদের উপর। এতো বড় রাষ্ট্রদ্রোহীতার মতো একটি অপরাধ অথচ খুব সহজেই ধামাচাপা দিয়ে ফেলেছে চক্রটি। এদের খুঁটির জোর অনেক তাইতো পরীক্ষা চলাকালীন সময় অত্র প্রতিষ্ঠানের পিয়ন জয়ন্ত নকল সরবরাহ করার সময় উপস্থিত পরীক্ষার্থীরা রংপুর জেলা প্রশাসন কর্তৃক নিয়োজিত কর্তব্যরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কে অবগত করেন। বিষয়টি বিব্রতকর হলেও সত্যি যে, অজানা কারণে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থাকা ম্যাজিস্ট্রেট সেই অপরাধী-কে আইনের আওতায় আনতে পারেনি!
অভিযুক্ত পিয়ন জয়ন্ত-এর নিকট নকল সরবরাহের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাদা আমি খুব সৎ মানুষ। দাদা দুধে ময়লা আছে কিন্তু আমার গায়ে ময়লা নেই। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এসব আপনাদেরকে বলেছে। পরে তিনি অফিসে এসে রফাদফা করব নিউজ বন্ধ করার জন্য প্রতিবেদকে অনুরোধ করেন।
পরিবার পরিকল্পনা সহকারী পরিচালক মতিউর রহমান, বলেন পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে হয়েছে, তবে ওএমআর সীট জালিয়াতি ও নকল সরবরাহের বিষয়ে আমার জানা নেই। এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে, পরিবার পরিকল্পনা (পার) এর উপপরিচালক (প্রশাসন ইউনিট) আবু তাহের মো: সানাউল্লাহ নুরী। পরে ওএমআর সীট জালিয়াতি এবং নকল সরবরাহ করার বিষয় জানাতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে ওএমআর সীট অতিরিক্ত যাওয়ার কথা নয়। যদি এমন হয়ে তাহলে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে আমাদের কাছে একটি কপি পাঠালে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
একই বিষয়ে জানতে চাইলে, রংপুর জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন জানান, এ বিষয়ে আমাদের এডিসি শিক্ষা উনি ভালো বলতে পারবেন। আপনি কষ্ট করে আগামীকাল একটু আসেন এসে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে যাবেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আব্দুল মান্নান